নিউজবাংলা ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বার্তাটি পৌঁছে দেন।

করোনা সংক্রমণ শুরুর পর কোনো বিদেশি মেহমানের সঙ্গে এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন যে, করোনা মহামারীর কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসতে না পারায় তাকে পাঠিয়েছেন।

নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শ্রিংলা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রিংলাকে পাঠানোর জন্য মোদির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।

এছাড়া মহামারীর মধ্যেও উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। এ সময় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও কথা হয়। আজ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার গণভবনে আরও যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে- কোভিড পরবর্তী সহযোগিতার বিষয়ে উভয় পক্ষই গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে ভ্যাকসিন সুবিধা বাংলাদেশ কিভাবে পেতে পারে তা আলোচনায় এসেছে।

করোনাপরবর্তী অর্থনীতি নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখন আবার নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হবে।

সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০টি রেল ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুশি হয়েছেন বলে শ্রিংলাকে জানিয়েছেন। এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব হিসেবে ‘বাবল ট্রাভেল’ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ এর আওতায় যেসব ফ্লাইট চলবে সেগুলোতে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীরাই যাতায়াত করতে পারবেন। অন্য কোনো দেশের যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না।

এর উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের রোগীরা যাতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এছাড়া দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাতে যাতায়াত বৃদ্ধি পায়।

এ প্রস্তাবে রাজি হলে রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সীমিত পর্যায়ে ভিসা চালু করবে ভারত। রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে। এ সময় শ্রিংলা জানান, ভারত চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং টেকসই উপায়ে তাদের দেশে ফিরে যাক।

এর বাইরে কোভিড পরবর্তী সময়েও দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য সহযোগিতা চালুর বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা যাওয়ার জন্য গোমতী রোড এবং অভ্যন্তরীণ নৌরুট চালু করা হবে বলে জানানো হয়।

এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি এবং মুজিববর্ষ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কানেক্টিভিটি, আইটি, পরমাণু, জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে পরিবেশগত ও যুব সমাজের উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

এ সময় বলা হয়, করোনাপরবর্তী উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত। এর আগে মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দু’দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন।

আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় ছাড়াও করোনাভাইরাসের টিকা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

করোনা মহামারীর মধ্যে শ্রিংলার এ ঝটিকা সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন বলেও মনে করছেন তারা।

এদিকে মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এ সফরে এসেছেন শ্রিংলা।

শ্রিংলার সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি জানান, তার (শ্রিংলা) সফর ঝটিকা বা আকস্মিক নয়, এটা নিয়মিত।

যেহেতু আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত, সুতরাং তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়েসহ বিভিন্ন ধাপে প্রচুর ইনটারঅ্যাকশন হয়। এ বছর কোভিডের কারণে বরং কমই হচ্ছে।

মোমেন বলেন, আজ দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা উৎপাদনের সঙ্গে ?ভারতের যুক্ত থাকার বিষয়ে আলোচনা হবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাসহ অন্য টিকাগুলো যাতে বাংলাদেশ দ্রুত পেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

সেটা অ্যামেরিকানদের হোক, অক্সফোর্ডের হোক, তারা ইন্ডিয়ায় ট্রায়াল দিচ্ছে, এর সবকটি কীভাবে আমরা দ্রুত পেতে পারি, সে ব্যাপারে সবার সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে।

এটার অংশ হিসেবে আমরা ভারতের সঙ্গে আলাপ করব। আমরা কীভাবে সবার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি, এ বিষয়ে আলোচনা করব।

বৈঠকের অন্যান্য এজেন্ডা সম্পর্কে সচিব বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় সব সময় আমাদের এজেন্ডার মধ্যে থাকে। বাংলাদেশ এবং ভারত কীভাবে আরও সহযোগিতা জোরদার করতে পারে, সে বিষয়টিও আছে।

এ ছাড়া শ্রিংলার মার্চের সফরে আলোচনার অগ্রগতিও এবারের বৈঠকের এজেন্ডায় থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে, ট্রান্সশিপমেন্টের কিছু কাজ হয়েছে, সব মিলিয়ে যেসব অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলো আমরা আলোচনা করব।

সামনে আরও কী করা যায়, সেগুলো আলোচনা করব। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও আলোচনায় থাকছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা খবর এসেছে। এর সঙ্গে এই সফরের সম্পর্ক আছে কি না, সে প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, এখানে তেমন কিছু স্পেকুলেট করার সুযোগ নেই।

আগে যেটা বললাম, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আসলে অনেক গভীর। এই গভীর সম্পর্ক আমাদের সারাক্ষণ নার্সিং করতে হয়, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির স্কোপ না থাকে।

আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা রকমের স্পেকুলেটিভ নিউজ এসেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করব যে, এগুলোর কোনো ভিত্তি আমরা দেখি না।

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা নিবিড় আছে, সেটা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রোথিত আছে। সে কারণে আমাদের যেন কোনো রকমের ল্যাপস না থাকে, সে ব্যাপারেও আমরা আলোচনা করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here