নিউজবাংলা২৪ রিপোট
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে একসঙ্গে তিন মাসের বিল দেয়ার ক্ষেত্রে ত্রূটিপূর্ণ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে প্রচুর অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিল সংশোধনে ছয়টি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে সরকার। সোমবার সংসদে বকেয়া ও ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ত্রুটিপূর্ণ বিল সংশোধনের জন্য ১০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। তার মানে গ্রাহকরা বিল পরিশোধে আরও অন্তত দশদিন বাড়তি সময় পাচ্ছেন।
সংশোধনে ছয়টি পদক্ষেপের মধ্যে যা থাকছে?
*কয়েক মাসের ইউনিট একত্র করে একসঙ্গে অধিক ইউনিটের বিল না করা।
* বকেয়া মাসগুলোর আলাদা বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা। (দরকারে আগের মাসের বিল থেকে ধারণা নেয়া যাবে)
* একসঙ্গে অধিক ইউনিটের বিল করে উচ্চ ট্যারিফ চার্জ না করা।
* ত্রুটিপূর্ণ বা অতিরিক্ত বিল দ্রুত সংশোধনের ব্যবস্থা করা।
* মে ২০২০ মাসের বিদ্যুৎ বিল মিটার দেখে প্রস্তুত করা।
* মোবাইল ফোন ভিত্তিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম ও অনলাইনে ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া।
এখনকার নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যত বেশি ইউনিট ব্যবহৃত হবে, ইউনিট প্রতি মূল্যও বাড়তে থাকবে। যেমন সর্বনিম্ন ৫০ ইউনিট ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৫০ পয়সা। ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি দাম হবে ৯ টাকা ৩০ পয়সা। যদি ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহৃত হয় তাহলে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।
এরকম পরিস্থিতি কিভাবে তৈরি হল?
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে আবাসিক গ্রাহকরা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিন মাসের বিল দেরিতে দিতে পারবেন। জুন মাসে বিল পরিশোধ করতে হবে এবং বিলম্বিত বিল পরিশোধে কোন অতিরিক্ত জরিমানা নেয়া হবে না।
এই পুরো সময়ে বাসাবাড়িতে বিলের কাগজ দেয়া হয়নি। বিল জমা নেয়াও বন্ধ ছিল। কিন্তু বিলের কাগজ দেয়া শুরু হলে অতিরিক্ত বিলের বহু অভিযোগ তৈরি হয়।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, “কোভিড-১৯ যখন শনাক্ত হল আমাদের এখানে বন্ধ (সাধারণ ছুটি) ঘোষণা করা হল। এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হল। এরপর যেগুলো ম্যানুয়াল মিটার সেগুলো সরাসরি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য কালেকশন করাটা সমস্যা হয়ে গেলো। অনেকের বিল অতিরিক্ত আসছে, বিভিন্ন রকম গরমিল হয়ে গেছে কারণ তারা বিলটা সরাসরি মিটার দেখে করতে পারেনি।”
যারা বিল দিয়ে ফেলেছেন তাদের কি হবে?
এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে জরিমানা করা হবে এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে তাই অনেকেই উচ্চ ট্যারিফ সহ ইতিমধ্যেই বিল পরিশোধ করে ফেলেছেন। তাদের একজন ঢাকার মগবাজারের রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলছেন, “ভয়ে আমরা বেশি টাকাসহ বিল দিয়ে দিয়েছি কারণ লাইন কেটে দিলে সেটা আবার আর এক সমস্যা। ৩০শে জুন তারিখের মধ্যে বিল না দিলে লাইন কেটে দেয়া হবে সেই ভয়ে অনেক বাড়িওয়ালাই বিল দিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা যা নেয়ার তাতো চলেই গেছে। এখন সরকার থেকে যদি আমাদেরকে এই অ্যামাউন্টটা অ্যাডজাষ্ট করে দেয় তাহলে মানবিক হবে।”
পদক্ষেপ সম্পর্কে যা বলছেন অভিযোগকারীরা : মিটার না দেখে বিল, বাড়তি বিল, কোন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না করেও কারখানায় আগের চেয়ে বেশি বিল এরকম নানা অভিযোগ ইতোমধ্যে অনেকেই করেছেন। কয়েক দিন আগে এরকম অভিযোগ সম্পর্কে মোহাম্মদপুরের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুন নাহার অভিযোগ করেছিলেন, সাধারণ ছুটি চলাকালীন তার সকল ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও আগের থেকে বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এখন এত গ্রাহকের তিন মাসের বিল সংশোধন কতটা সম্ভব হবে সেনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কামরুন নাহার বলছেন, “কোন কিছুই অসম্ভব না যদি আমরা চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা আসলে কতটুকু চেষ্টা করবো? কোভিড ১৯-এর কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইউনিট না দেখে এমনি এমনি বিল তৈরি করে দিয়েছে। এটা নিশ্চয়ই সরকার থেকে বলা হয়নি। এটা করেছে মাঠ পর্যায়ের লোকজন। ”এখন উপর থেকে সংশোধন করতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের লোকজন যদি ঠিকমতো কাজটা করে, তাহলে এই পদক্ষেপ সম্ভব। কিন্তু সেই চেষ্টাটা কোন্ লেভেল থেকে কতটুকু করা হবে সেটাই হল প্রশ্ন,” বলছেন কামরুন নাহার।
ওদিকে ত্রুটিপূর্ণ বিলের গরমিল সমাধান করতে না পারলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে রিপোর্ট আসার পর তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here