নিউজ বাংলা ডেস্ক:

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে শোকস্তব্ধ বাংলাদেশ। এ ঘটনা বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতার সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলেছে। বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ও নির্যাতন একটি সাধারণ বিষয়। এ জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ আছে। তাতে বলা হয়, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালায়, চাঁদাবাজি করে। আবরার হত্যাকাণ্ডে তারা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজন নেতাকর্মীকে। বুয়েটে নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে হত্যা করা আবরার ও পরবর্তীতে সহপাঠী, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের ওপর রিপোর্ট করতে গিয়ে এ কথা বলেছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, আবরার হত্যাকাণ্ডের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নির্যাতন নতুন কিছু নয়। হোস্টেলে থাকতে হলে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রায়ই জোরপূর্বক মিটিং ও র‌্যালিতে যেতে বাধ্য করা হয়। ভিন্নমত পোষণ অথবা নেতাদের নির্দেশ অমান্যকারীদের প্রহার ও নানাভাবে হয়রানি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ২০১৮ সালে যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় আন্দোলন করছিল তখন তাদেরকে প্রহার করেছে হেলমেট পরা অজ্ঞাত হামলাকারীরা। এ জন্য দায়ী করা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। একই বছর আন্দোলনরত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলার শিকার একজনের ছবিতে তারা হাতুড়ি দিয়ে পিটাতে থাকে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

বিবিসি আরো লিখেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পেশীশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ছাত্রদের। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো অফিসিয়ালভাবে ছাত্র সংগঠন রাখতে অনুমোদিত নয়, তবু তাদের উপস্থিতি অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। এ নিয়ে বিবিসি বাংলাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা পর্যন্ত বলেছেন, এখন সময় এসে গেছে এই ধরণের রাজনীতিকে সমর্থন করা উচিত হবে কিনা তা বিবেচনা করা। যেসব পিতামাতা স্বপ্ন দেখছেন তাদের সন্তানরা একদিন বুয়েটে পড়বে শুধু তারাই নন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই ওই একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

বিবিসি আরো লিখেছে, সোমবার ঢাকা ও অন্যান্য শহরে রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা স্লোগান দিয়েছেন। সড়ক অবরোধ করেছেন। বুয়েটে আবরার হত্যাকারীদের মৃত্যুদ- দাবি করে মঙ্গলবারও তারা বিক্ষোভ করেছেন। সাবেক শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকদের অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। বুয়েট টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মাসুদ বলেছেন, আবাসিক হলে একজন ছাত্র নির্যাতনে মারা যাবে এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আবরার ফাহাদ হত্যা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

ওদিকে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, আবরার ফাহাদের হল থেকে তদন্তকারীরা ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। মঙ্গলবার এই গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩। তারা সবাই বুয়েটের। আরও ৬ জন রয়েছে সন্দেহের তালিকায়। ঢাকা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, প্রহারে মৃত্যু হয়েছে আবরারের। স্থানীয় মিডিয়াগুলো ছাত্রলীগের সদস্যদের উদ্ধৃত করে বলছে, আবরার ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ইসলামপন্থি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকার অভিযোগে প্রহার করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের করা একটি পানিচুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে আবরার একটি পোস্ট দেয়ার পরে এ ঘটনা ঘটেছে। ওদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এক বিবৃতিতে বলেছে, তদন্তের পরে তারা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ থেকে ১১ সদস্যকে বহিষ্কার করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here