আবদুর রহমান মল্লিক

পরিপক্ব হতে না হতেই বাজারে আগাম চলে এসেছে রসনা জাগানো টক ফল কতবেল। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি ও করোনাকালীন ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় একশ্রেণির ফল ও সবজিব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা কতবেল সংগ্রহ করে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পসরা সাজিয়ে বসেছে। পাইকারি হিসেবে খাঁচি ধরে বিক্রি হচ্ছে এই কতবেল। ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানের কতবেল খাবার যোগ্য হতে লাগবে আরও এক থেকে দেড় মাস। খুচরা ব্যবসায়ীরা এই কতবেল কিনে নিয়ে কিছুুদিন রৌদ্রে শুকাবেন। পাক ধরার পর তা বাজারে বিক্রি করবেন। এত আগাম কেন এটি বাজারে আনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বন্যা ও করোনার কারণে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে, তাই ক্ষতি পোষাতে এটা করতে হচ্ছে। তবে অপরিপক্ব ফল তোলায় এর পুষ্টিগুণ কমে যাওয়া ও মুনাফালোভী মানসিকতার কথা স্বীকার করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান রাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো রয়েছে কতবেল। মান ও সাইজ ভেদে শ’প্রতি কতবেল বিক্রি হয় ৩শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা। কিন্তু এ সময় কোনো গ্রাহকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। জানা গেছে, দেশের ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ প্রভৃতি জেলা থেকে এই কতবেল আসে কারওয়ান বাজারে। পরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ফুটপাত, স্কুল-কলেজ কিংবা জনবহুল এলাকায় হকাররা পাকা কতবেলে কাঠি দিয়ে মসলা মিশিয়ে তা মুখরোচক খাবার হিসেবে বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে তা তুলে দেয়। দেশি ফল হিসেবে কতবেলে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন টক স্বাদের এ ফলের খাদ্যশক্তি কাঁঠাল ও পেয়ারার সমান। দেখলেই জিবে জল আসার মতো এই ফল পুষ্টিগুণ বিচারে অনন্য। শক্ত খোলসে আবৃত ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ মৌসুমি এ ফল মূলত স্বাদের জন্যই খাওয়া হয়। এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বুক ধড়ফড় এবং রক্তের নিম্নচাপ রোধেও সহায়ক। গুড় বা মিছরির সঙ্গে কতবেল মিশিয়ে খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কতবেলে রয়েছে ট্যানিন নামক উপাদান, যা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা ভালো করে। কাঁচা কতবেল ছোট এলাচ, মধু দিয়ে মাখিয়ে খেলে বদহজম দূর হয়। এমনকি কতবেলের খনিজ উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিসের আয়ুর্বেদি চিকিৎসায় কতবেল ব্যবহার হয়। কিডনি সমস্যায় কতবেল খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে এটি উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ফল নিয়মিত খেলে কিডনি সুরক্ষিত রাখে। প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যায় কিডনি সমস্যা দূর করার জন্য সেরা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো কতবেল। ফলটি যকৃত ও হৃৎপিন্ডের জন্যও বিশেষ উপকারী। আমিষের অভাব পূরণে এই ফলটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আম, কাঁঠাল, লিচু, আমলকী ও আনারসের চেয়ে এতে রয়েছে ২ থেকে ৪ গুণ বেশি আমিষ। বিভিন্ন গুণসম্পন্ন এ ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু উৎপাদনকারীদের চেয়ে এ ফলটির ক্ষেত্রেও অধিক মুনাফা লাভ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here