নিউজবাংলা ডেস্ক

ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি। প্রায় ৬৪ বিলিয়ন বা ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে তার। তার ছোট ভাই অনিল আম্বানি। তিনিও কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিলেন একজন বিলিওনিয়ার। ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী।

কিন্তু গত সপ্তাহে লন্ডনের একটি আদালতে শুনানিকালে মুম্বাইতে বসে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি দাবি করেন, সঞ্চিত অলংকার বেচে এখন তাকে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনিল আম্বানি এর আগে দাবি করেছিলেন তার সম্পত্তির পরিমাণ ‘নেট জিরো’ অর্থাৎ শূন্য।

মুকেশ এবং অনিল আম্বানি মূলত উত্তরাধিকার সূত্রেই ভারতের রিলায়েন্স ব্যবসার সাম্রাজ্যের অধিকারী হন। রিলায়েন্স ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাদের বাবা ধীরুভাই আম্বানি। ২০০২ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর দুই ভাই ব্যবসার দেখাশোনা করতেন।

কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ তৈরি হওয়ার পর দুই ভাই রিলায়েন্স গ্রুপ ভেঙে আলাদা হয়ে যান। কিন্তু মুকেশ আম্বানি যেখানে তার সম্পদ দিনে দিনে আরও বাড়িয়েছেন, সেখানে অনিল আম্বানি কীভাবে এ রকম অবস্থায় এসে পৌঁছালেন?

তিনটি চীনা ব্যাংকের দায়ের করা এক মামলায় গত শুক্রবার মুম্বাই থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে লন্ডনের এক আদালতের শুনানিতে হাজির থাকতে হয়েছিল অনিল আম্বানিকে।

অনিল আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স কমিউকেশন্স লিমিটেডের কাছে ৭০ কোটি ডলার পাওনা আদায়ের জন্য মামলাটি করেছে চীনের এই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। ২০১২ সালে তারা কোম্পানিটিকে এই অর্থ ঋণ দিয়েছিল অনিল আম্বানি ব্যক্তিগতভাবে এই ঋণের গ্যারান্টি দেয়ার পর।

এর আগে আদালত রুল জারি করে অনিল আম্বানিকে চীনা ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিন চীনা ব্যাংকের একজন আইনজীবী সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘আমাদের যাতে এক পয়সাও দিতে না হয়- সে জন্য তিনি (অনিল) এখন নখদন্ত দিয়ে লড়াই করছেন।’

আদালতে শুনানি চলাকালে একজন বিচারক মন্তব্য করেছিলেন, ‘অনিল আম্বানি বিলাসী জীবনযাপন করেন।’ এর জবাবে অনিল আম্বানি দাবি করেন যে, তার জীবনযাপন খুবই সাদাসিধে। তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেন বলে যেসব জল্পনা, তা মোটেই সত্য নয়।

অনিল বলেন, ‘এটি ভুল, মোটেই সত্য নয়। আমার মনে হয় জিনিসটা সম্মানের সঙ্গে সঠিকভাবে তুলে ধরা দরকার। আমার প্রয়োজন অত বিশাল নয় এবং আমার জীবন খুবই সুশৃঙ্খল। আমার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত বিলাসবহুল জীবন নিয়ে যেসব ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তা একেবারেই জল্পনা-কল্পনা।’

তাদের কাছে দামিদামি শিল্পসামগ্রীর যে সংগ্রহ আছে, সেগুলোর মালিক তার স্ত্রী বলে দাবি করছেন তিনি। যে বিলাসবহুল ইয়ট তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন, সেটির মালিকও তিনি নন, একটি কোম্পানি, বলছেন আম্বানি।

পাওনাদাররা যেন অনিল আম্বানির সম্পদের নাগাল না পান, সে জন্যে এসব সম্পদ তিনি বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় স্থানান্তর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিল আম্বানি সবসময় দাবি করে এসেছেন, তিনি কখনোই তিনটি চীনা ব্যাংককে ঋণের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেননি।

শুক্রবার শুনানির সময় অনিল আম্বানিকে তার ক্রেডিট কার্ডে লন্ডনে যেসব খরচ করা হয়েছে সেসব নিয়েও জেরা করা হয়। এর মধ্যে লন্ডনের হ্যারডসেও এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। অনিল আম্বানি জানিয়েছেন, কার্ডটি তার মা ব্যবহার করেছিলেন।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে শুনানির সময় নিজের মা কোকিলাবেন আম্বানিকে দেয়া ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং ছেলেকে দেয়া ছয় কোটি ১০ লাখ ডলারের ঋণ সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, এসব ঋণের শর্ত তার ঠিক মনে পড়ছে না, তবে এই অর্থ উপহার হিসেবে দেয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here