নিউজবাংলা ডেস্ক : ভুল করে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানকে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভুলের দায় স্বীকার করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভুলের কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরিচালক বলেন, গত ২৫ শে জুলাই আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটি প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কেননা আমাদের এখানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। তারা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহের প্রথম দিকে শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতো। সেই ধারাবাহিকতায় ২৪শে জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা আমাদের কাছে পাঠানো হয়। এটি সন্ধ্যায় আমরা গ্রহণ করি।

২৪ ঘণ্টাই রিপোর্ট দেয়ার যে বাধ্যবাধকতা সেই বাধ্যবাধকতার মধ্যে আমরা একটু ব্যত্যয় এর মধ্যে পড়ে যাই। পরবর্তী দিনে আমাদের এখানে সরকারিভাবে যারা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আছেন এবং অন্যান্য যারা আছেন তারা এই নমুনা পরীক্ষার কাজে হাত লাগান। সেদিন আমাদের ৪০২টি নমুনা পরীক্ষা করতে সময় একটু বেশি লেগে যায়।
তিনি আরো বলেন, সময় বেশি লেগে যাওয়ার কারণে যাত্রীর তথ্য একটি ফর্মের মাধ্যমে এমআইএস শাখার সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়া হয়। সেখান থেকে তথ্য শিট আমাদের কাছে আসে। সেই তথ্য এন্ট্রি দেয়ার জন্য আমাদের এখানেও ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা কাজ করেন। সময় বেশি লেগে যাওয়ার কারণে আমাদের সমন্বয়ক ইমিগ্রেশন বুথ এবং ডিএনসিসি বুথে কথা বলেন। ওইদিন যাদের বিমানযাত্রা ছিল তাদের যাত্রা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য আমাদের এখান থেকে রিপোর্ট তৈরি করে তাদের ইমেইলে পাঠানো হয়। সেই হিসেবে আমরা কাজ করি। ফলাফল আসার পর তথ্য শিটে কম্পিউটারে এন্ট্রি দেই। সেই এন্ট্রির সময় আমাদের অপারেটরদের যে কারও মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি প্রিন্ট আকারে আমাদের কাছে আসে। সেই তথ্য অনুযায়ী আমরা একটি রিপোর্ট কম্পিউটারে টাইপ করি। সেটা আমাদের একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং একজন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন।

ঐশীর রিপোর্টের বিষয়ে পরিচালক বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমরা প্রথমে কিছু সংখ্যক যাত্রীর ফলাফলের রিপোর্ট এবং রাত সাড়ে ৯ টায় বাকি যাত্রীদের রিপোর্ট পাঠাই এমআইএস ইমিগ্রেশন এবং ডিএনসিসি’র এর ইমেইলে। যখন এই ডাটাগুলো আমাদের অপারেটররা এমআইএস এর সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়ার কাজ করে, প্রথম যাত্রার ইমেইলে প্রাক্তন মন্ত্রী শাজাহান খানের কন্যা ঐশী খানের রিপোর্ট ছিল। সেটি ভুলক্রমে ফলাফল লেখা ছিল নেগেটিভ। ওই নেগেটিভ রিপোর্ট আমাদের কম্পিউটার থেকে তৈরি করা হয়। আমাদের একজন অফিসার সেটি স্বাক্ষর করেন এবং ইমেইলে পাঠানো হয়।

পরিচালক বলেন, প্রথমে যেটি যায় সেটি নেগেটিভ একটি রিপোর্ট যায়। দ্বিতীয় দফায় যাত্রীদের রিপোর্ট যখন আমরা সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিতে যাবো, তখন সামগ্রিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায় ওই রিপোর্ট আসলে নেগেটিভ না। সেটি পজেটিভ। তখন আমাদের সমন্বয়কারী সব রিপোর্টের প্রিন্ট কপি বের করে সব রিপোর্ট আমার স্বাক্ষর দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবার প্রস্তুত করেন এবং আগের মতো ইমেইলে পাঠিয়ে দেন। তখন এই ডাটা আমরা সফটওয়্যারে এন্ট্রি করে দেই। সেখানে ঐশী খানের ফলাফল পজিটিভ হিসেবেই এন্ট্রি করা হয়। এমআইএস থেকে অটো জেনারেট হয়ে রিপোর্ট ডিএনসিসি বুথে যায়। ঐশী খান যেই রিপোর্ট হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এই রিপোর্ট আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ভুল করে করা হয়েছিল। যেটি আমরা সংশোধন করেছি পরবর্তী ইমেইলের মাধ্যমে।

দায় স্বীকার করে পরিচালক আরো বলেন, আমাদের এখানেই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভুলের জন্য ওনার কাছে নেগেটিভ রিপোর্টটি যায়। এর কারণে জনসম্মুখে তিনি হেয় হয়েছেন। সেটা আমরা স্বীকার করি। আমরা এটি আরো খতিয়ে দেখছি। যিনি ভুলটি করেছেন তিনি সাময়িক সময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। তার বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো।
উল্লেখ্য, ২৬ শে জুলাই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান। তবে অনলাইনের রেজাল্টের সঙ্গে তার হাতে থাকা করোনার রিপোর্টে মিল না পাওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে ফেরত পাঠান।
এদিকে ২৭শে জুলাই দুপুরে নিজের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐশী খান। দুপুর ১২টার দিকে শাজাহান খান ও ঐশী খান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উপস্থিত হয়ে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের কাছে তাদের অভিযোগের চিঠি জমা দেন। ওই চিঠিতে ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দাবি করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here