ফাতেমা ইরাজ:

নারী শব্দটা শুনলেই সবার আগে আমাদের মাথায় যেটা আসে তাহলে বারো হাত একটা লম্বা শাড়ি, মাথার চুল হাতে পেঁচানো একটি খোঁপা। নারীর কাজ বলতে আমরা বুঝি সে রাঁধবে, বাচ্চা সামলাবে, শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করবে। এর বাইরে তার জন্য আর কোন কাজ নেই। এটা আমাদের দোষ না,যুগের পর যুগ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ নিয়ম দেখে আমরা অভ্যস্ত। আমরা তো প্রায় ভুলতেই বসেছি নারীও মানুষ। পুরুষের মতো তারও সবকিছুতে অধিকার সমান। আজও আমরা নারীর উচ্চ শিক্ষা মেনে নিতে পারিনা। কর্মজীবী নারী শুনলেই আঁতকে উঠি। নানা অজুহাতে অবরুদ্ধ করতে চাই নারীর পথচলা।তাকে আরষ্ঠ করে রাখতে চাই রান্নাঘরে।আর যখন কেউ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তখন তাকে আমরা ধর্ম ও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করি। এখন প্রশ্ন তাহলে নারীরা নিরাপদ নয় কেন? কার কাছে সে অনিরাপদ? পুরুষের কাছেই তো! পরক্ষণেই যুগ যুগ ধরে নারীকে ধর্মের দোহাই দিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখার নজির নতুন নয়।কিন্তু যখন একজন নারী ভিক্ষা করে, কই তাকে তো কেউ ধর্মের দোহাই দেয় না। অথবা চৌদ্দ বছর বয়সী রুমানা যখন রিকশা চালিয়ে সংসার চালায় তাকে বাহবা দেয় আমাদের সমাজ।আসল কথা হচ্ছে ধর্ম বা নিরাপত্তার দোহাই এর পিছনে সবথেকে বড় কারণ হচ্ছে নারীকে আমরা নেতৃস্থানীয় কোথাও বসাতে চাই না। রুমানা রিকশা চালানোতে কোন মহিলার ভিক্ষা করায় আমাদের কোন সমস্যা হয় না।কারণ ওরা আমাদের উপরস্থ পদে নেই।কিন্তু সমস্যা হয় যখন একজন নারী নেতৃস্থানীয় কোথাও বসতে চায়। আর যখন ধর্ম নিরাপত্তাহীনতা এসবের দোহাই দিয়ে নারীকে আটকে রাখতে  না পারি তখন আমরা হাওয়া আক্তার জুই এর আঙ্গুল কেটে ফেলি (প্রথম আলো ১৫.১২.২০১১ )। মেরে ফেলি সুমাইয়াদের। যখন তাদের প্রাণশক্তি হয় অদম্য তখন আমরা তাদের রুখতে প্রাণনাশের পথ বেছে নিই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ এর মাস্টার্সের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া ভালবেসে বিয়ে করেছিল মোস্তাককে। বেকার তবু সুমাইয়া চোখে সেই ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ। তাই তার বেকারত্ব নিয়ে ভাবেনি সুমাইয়া।সুমাইয়ার বাবার টাকায়ই চলছিলো মোস্তাক।স্বপ্ন ছিল একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে বিসিএস ক্যাডার হয়ে সকলের দায়িত্ব নেবে।ভালো থাকবে সবাইকে নিয়ে। হবে সুন্দর একটা সংসার। এতো ভালোবাসার পরেও মোস্তাক তুষ্ঠ হতে পারেনি,সে মেনে নিতে পারেনি স্ত্রী চাকুরি করুক।স্ত্রীর স্বপ্ন যোগ্যতা তার পশু স্বত্বাকে বারবার জানান দিয়ে গেছে তার অযোগ্য হবার কথাকে তবু সে পদতলে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে স্ত্রীকে।সে হয়ে উঠেছে হিংস্র দানব। শ্বশুরবাড়ির কেউ চায়নি সুমাইয়া হোক আত্মনির্ভরশীল।যুগ যুগ ধরে তাদের মস্তিষ্কে ক্যান্সারের মতো বাসা বেঁধে আছে নারীকে বন্দী করে রাখার প্রচেষ্টা।স্বৈরাচারী শাসকদের মত নিজেদের ইচ্ছা খাটাতে উদ্যত হয়ে পড়ে তারা। আর তারই মাসুল চুকাতে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ননদের হাতে প্রান দিতে হলো সুমাইয়াকে। এভাবেই কি সুমাইয়াদের স্বপ্নকে হত্যা করা করা হবে সীমাহীন পৈশাচিকতায় । নারী হয়েও যে শাশুড়ী ননদ আরেকটি নারীকে হত্যায় সহায়তা করে সেটি ভেবেও আমরা আতঙ্কিত হই ব্যাথিত হই। কতকাল চলবে এই অমানবিকতা। কবে জেগে ওঠবে মনুষ্যত্ব।

ফাতেমা ইরাজ : কবি ও লেখক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here