নিউজ বাংলা ডেস্ক :

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজার পর বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই। এই সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকার ব্যস্ত রয়েছে বাজেট নিয়ে। এই সুযোগে অনৈতিক মুনাফা করছেন তারা।
তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে সরকারের নজরদারি রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপারেশন চলছে। কোনও অনিয়ম চোখে পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বলছেন, বাজেট পাসের আগে বাড়তি শুল্কের দোহাই দিয়ে পণ্যের দাম বাড়তে পারে না।
গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে আটা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গুঁড়ো দুধ, চিনি, মসুর ডাল, ডিম ও মসলার দাম। বেড়েছে সিগারেটের দাম। বাদ যায়নি চালের দামও। এসব পণ্যের মধ্যে দেশীয় শিল্প রক্ষায় আমদানি করা অপরিশোধিত চিনি, গুঁড়ো দুধের ওপর শুল্ক বাড়ালেও কোনও ধরনের ট্যাক্স আরোপ করা হয়নি পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আটা ও চালের ওপর। এরপরও এসব পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ১৫ টাকা। ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বাড়তি শুল্কে আনা কোনও পণ্যই তো বাজারে আসেনি। বাজেটও কার্যকর হয়নি, হবে ১ জুলাই থেকে। বাজারে যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা আগের শুল্কে আনা। অথচ বাজেট অনুমোদনের আগেই নানা অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়েছে।
তারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে। আরোপিত শুল্কের হার কমতে বা বাড়তে পারে। চাল, আটা, ডিম ইত্যাদির দামও বেড়েছে, যেগুলোর ওপর কোনও শুল্ক নেই।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। মোটা চালের দাম ৩৫ থেকে বেড়ে ৩৭ টাকা হয়েছে। নাজির শাইল ও মিনিকেট নামের সরু চালের দাম ৫৫-৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। নামিদামি কোম্পানির প্যাকেটজাত সরু চালের কেজি ৭০ টাকা ছুঁয়েছে।
বাজেটের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র না থাকলেও ৩৩ টাকা কেজি দরের প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। ৮০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। ৬০ টাকা কেজি দরের রসুন হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। একইভাবে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ৪৭ টাকা কেজি দরের চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়। হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৬ টাকা। মহল্লা বিশেষে এ দাম আরও বেশি।
জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন  বলেন, ‘বাজেট পাসের আগে অতিরিক্ত দাম আদায় করা অনৈতিক। যে পণ্যে শুল্ক আরোপ করাই হয়নি, সেটি শুল্কের দোহাই দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা পুরোপুরি অনৈতিক। এটি ঠিক নয়। যদি কেউ করে থাকে তাহলে সে আইনের চোখে অপরাধী।’
তিনি বলেন, ‘যে পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বা ডিউটি বেড়েছে, সেসব পণ্য নতুন শুল্কহারে আমদানি না হওয়া পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে না। মোট কথা, বেশি দামে আনলে বেশি দামে বিক্রি করবেন, কম দামে আনলে কম দামে বিক্রি করবেন। এর ব্যতিক্রম রীতিমতো অন্যায়।’
রাজধানীর কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স শুক্কুর টেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম লাল মিয়া বলেন, ‘আমাদের পাইকারি বাজারে দাম সে হারে বাড়েনি। যদি অস্বাভাবিক কিছু বেড়ে থাকে তা বেড়েছে খুচরা বাজারে।’ তিনি জানান, চিনি ও গুঁড়ো দুধের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। তাই এ দুটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বাজেট ঘোষণার পরপরই। বেশি দামে কিনে আনলে কম দামে কীভাবে বিক্রি করবেন বলে প্রশ্ন তোলেন এই পাইকারি ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজেটে প্রস্তাবিত শুল্কহার পরিবর্তন হতে পারে। বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। মোট কথা, নতুন বাজেট কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। নতুন শুল্কহারও কার্যকর হবে সেই দিন থেকে।’ বাজারে আরোপিত শুল্কের দোহাই দিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব তার বলেও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম  বলেন, ‘বাজারে সরকারি মনিটরিং চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করছে। এর বাইরেও নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর, বিএসটিআই-এর কার্যক্রম চলছে। কোথাও কোনও অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here