ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

নিউজ বাংলা ডেস্ক : রাজধানীর ধানমণ্ডি-কলাবাগান, নিউমার্কেট এবং হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনে ভোটপ্রার্থী রয়েছেন ছয়জন।

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, ধানের শীষে বিএনপির আবদুল মান্নান, হাতাপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আ. আউয়াল, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কে এম শামসুল আলম, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) বাহারানে সুলতান বাহার এবং লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পাটির্র হেলাল উদ্দিন রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে।

১৯৯১ সালে ধানের শীষের পর ১৯৯৫ সালে নৌকা, ২০০১ সালে আবার ধানের শীষ বিজয়ী হয়েছিল এই আসনে। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে তাপস ২০০৮ সালে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েই জয় পান এই আসনে। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

তিন লাখ ১৩ হাজার ৭৫৮ জন ভোটারের এই আসনে গত কয়েক বছরের ভোটের সমীকরণে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে তাপস ও  মান্নানের মধ্যেই হবে, তা স্পষ্ট।

রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী ফজলে নূর তাপস তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে যেভাবে ভোট ও সমর্থন কামনা করেছেন এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো :

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস
সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ঢাকা- ১০

প্রিয় এলাকাবাসী,
আসসালামু’আলাইকুম/আদাব/শুভেচ্ছা।
প্রথমেই আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমীনের শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ, যেই এলাকায় আমি আমার পিতা-মাতা কে হারিয়েছি- শৈশব এবং কিশোর জীবন কাঁটিয়েছি, পড়াশুনা, খেলাধুলা করেছি, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছি, বেড়ে উঠেছি এবং পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, সেই এলাকার জনগণেরই সেবা করার সুযোগ তিনি আমাকে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি আপনাদের মাঝে এসেছিলাম, আপনারা অনেক ভালোবাসা, আদর, স্নেহে আমাকে আপনাদের সন্তান-আপনজন হিসেবে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন, আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাদেরকে জানাই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
গত দুই মেয়াদের দশ বছরে আমি নিরলসভাবে চেষ্টা করেছি দল মত নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করতে। অবহেলিত-অভিভাবকহীন ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কলাবাগান ও নিউমার্কেট) আসনের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে আপনাদের সহায়তায় এবং সহযোগিতায় আমি চেষ্টা করেছি এক এক করে প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধান করতে। তদুপরি, এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিয়েছি নতুন নতুন প্রকল্প। গত দশ বছরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র আপনাদের মাঝে তুলে ধরছিঃ
সন্ত্রাস-ছিনতাই-চাঁদাবাজি মুক্ত শান্তির নীড় হিসেবে এলাকাকে গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছি।
শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দীর্ঘদিনের দখলকৃত সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে হাজারীবাগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছেঃ
(১) শহীদ বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় (এক একরজমির উপর) এবং (২) শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (এক একরজমিরউপর)।
দীর্ঘদিনের অবহেলিত লেদার টেকনোলজী কলেজ-কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউটে রূপান্তর করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের অবৈধ দখলকৃত সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে কাঁটাবন, নিউমার্কেটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এলাকার একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী ডঃ আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বাংলাদেশে এটাই প্রথম কোন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে নামকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খান হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ষষ্ঠ তলা বিশিষ্ট শিক্ষাভবন।
অস্বচ্ছল, মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়/মহাবিদ্যালয়ে প্রবর্তন করা হয়েছে শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি শিক্ষা বৃত্তি ট্রাস্ট/শহীদ শামছুন্নেছা আরজুমণি শিক্ষা বৃত্তি ট্রাস্ট।
মোঘল সাম্রাজ্যের সময়ে নির্মিত ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ এর ঐতিহ্য পূর্নবহাল সহ সৌন্দর্য বর্ধন কার্যক্রম চলমান আছে।
ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ মসজিদ, বাক্কাতিল মসজিদ, তাকওয়া মসজিদ ও তিন মাজার মসজিদ নতুন নির্মাণ সহ এলাকার ১২০টি মসজিদের উন্নয়নে শরিক থেকেছি।
ধানমন্ডি লেকের ওয়াকওয়ে সম্প্রসারণ সহ আধুনিকায়ন এবং সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।
পানি সংকট নিরসনে গণকটুলি, গজমহল, সেন্ট্রাল রোড, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি সহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক পানির পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় থেকে হাজারীবাগ-ধানমন্ডিকে রক্ষার্থে মালিকপক্ষ- শ্রমিকপক্ষ সকলকে আস্থায় নিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ট্যানারীশিল্পকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুঃস্থ, গরীব এবং স্বল্প আয়ের মা ও শিশুদের সু-চিকিৎসার লক্ষ্যে অবৈধ দখলকৃত সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ শামছুন্নেছা আরজুমণি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র।
দীর্ঘদিনের দখলকৃত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে ‘হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতার নিরসনে বড় পাইপ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে সমগ্র এলাকায় পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, সাতমসজিদ রোড (কাকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট) সহ বিভিন্ন স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
কালুনগর, হাজারীবাগ, কাঠালবাগান বক্সকালভার্ট এবং সুন্দরবন হোটেল সংলগ্ন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
গণকটুলী সিটিকলোনীতে নতুন ৭টি ভবন নির্মাণ করে স্ক্যাভেঞ্জার্সদের আবাসনের সুব্যবস্থা করা হয়েছে- আরো নতুন ছয়টি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে।
খেলা-ধুলার উন্নয়নে হাজারীবাগ পার্ক, কলাবাগান মাঠ, আবাহনী মাঠকে উন্নত এবং শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ চলমান রয়েছে।
দল-মত নির্বিশেষে এলাকার ১০ হাজারের অধিক বেকার তরুণ-তরুণীর সরকারি-বেসরকারি চাকুরিসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চারটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ধানমন্ডি কে সম্পূর্ণরূপে ‘বর্জ্য কন্টেইনার’ মুক্তসহ এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সালেহা উচ্চ বিদ্যালয়ে লিফটসহ আট তলা ভবন, মেহেরুন্নিসা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা মহিলা কলেজ, নিউ মডেল স্কুল, নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজ, ডঃ মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং কাকলি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ সহ এলাকার অন্যান্য বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়/মহাবিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ চলমান রয়েছে।
নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করে জনসাধারণের অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিউমার্কেটের ঐতিহ্য বজায় রেখে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ওয়াসার মাধ্যমে এলাকাব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
আপনাদের জন্যে, এই এলাকার জন্যে, কতটুকু করতে পেরেছি সেটা বিচারের ভার আপনাদের উপর। কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, এই ক্লান্তিহীন পথ চলায় আমার আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং প্রচেষ্টার এক বিন্দু কমতি ছিলনা। গত দশ বছরের প্রত্যেকটি দিন-রাত আমি আপনাদের সাথে এবং পাশে থেকেছি।
শান্তি ও শিক্ষার নীড় এই ঢাকা-১০ আসনের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে আমার কিছু পরিকল্পনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরছিঃ
(১) যানজট নিরসনে মেট্রো রেল- এর সংযোগ ধানমন্ডির সড়ক নং-২৭ থেকে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে নিউমার্কেট দিয়ে নিয়ে যেতে চাই। যাতে করে, অত্র এলাকার জনগণ অনায়াসে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে পারে এবং অন্য এলাকার মানুষ এই এলাকায় গাড়ী ব্যবহার না করেও যাতায়াত করতে পারে। ফলে আশাকরি আমাদের এলাকার যানজট প্রায় ৬০% হ্রাস পাবে।
(২) যানজট নিরসনে ধানমন্ডি ২নং সড়ক থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ।
(৩) হাজারীবাগের ট্যানারী শিল্পের খালি জমিতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন মডেল আবাসিক এলাকা নির্মাণ।
(৪) শহীদ শামছুন্নেছা আরজুমণি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণ।
(৫) কাঁটাবনে বহুতল বিশিষ্ট শহীদ লে. কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ।
(৬) বহুতল বিশিষ্ট হাজারীবাগ কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ।
(৭) ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র নিউমাকের্টে বহুতল পার্কিং লট নির্মাণ।
এই স্বপ্নের পথে পথ চলায় আপনাদের সমর্থন, আস্থা আর ভালোবাসাই আমার পাথেয়। আমাদের এই পথ চলা অব্যাহত রাখতে আপনাদের সমর্থন, আস্থা ও ভালোবাসা অটুট থাকবে -এটাই আমার একান্ত প্রত্যাশা।

শুভেচ্ছা নিরন্তর, অনবরত, অবিরলধারায় –
(স্বাক্ষরিত)
শেখ ফজলে নূর তাপস
ব্যারিস্টার-এট-ল
সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ঢাকা- ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here