নিউজবাংলা ডেস্ক:

ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘাতের ঘটনায় আলোচিত বিপ্লব চন্দ্রের ফেসবুক আইডির হ্যাকারকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই হ্যাকার ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়িয়েছেন বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরকারকে নিশ্চিত করেছে।
এ তথ্য জানিয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই হ্যাকারকে দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রেপ্তারের পরই তাঁর পরিচয় প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
ভোলার ঘটনাটি সাধারণ নয় উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে একটি চক্র সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নিহত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো ছিল, যা আমাদেরকে সন্দিহান করেছে।’
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গত রোববার ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিপ্লব চন্দ্রের বিচার দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ দেড় শতাধিক মানুষ।
এর আগে শুক্রবার বিকেল থেকে বিপ্লব চন্দ্রের নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে কয়েকজনের মেসেঞ্জারে বার্তা (মেসেজ) পাঠানো হয়। কয়েকজন এই বার্তার স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দেয়। একপর্যায়ে সেটি ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়ে এবং বিপ্লব চন্দ্রের শাস্তির দাবি ওঠে। বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক দফা বিক্ষোভও দেখানো হয়।
ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্র বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে জানিয়ে থানায় জিডি করেন। পরদিন শনিবার সকাল, দুপুর ও বিকেলেও বোরহানউদ্দিনের কয়েকটি স্থানে বিপ্লবের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। এরপর রোববার ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়ানোর জেরে সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
ওই সংঘাতের ঘটনার পর ফেসবুকের কাছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে হ্যাকিং–সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়। সরকারের অনুরোধে সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশকে বিপ্লবের ফেসবুক আইডির হ্যাকারের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। সিঙ্গাপুরে শনি ও রোববার ছুটির দিন থাকায় এ তথ্য পেতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সরকারের একটি সংস্থা গতকাল বিকেলে ফেসবুক থেকে পাওয়া তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। ফেসবুক যে ব্যক্তিকে হ্যাকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাঁর নাম ও পরিচয় জানতে পেরেছে তারা। বিপ্লবের ফেসবুক হ্যাকড হওয়ার পরই তাঁর ম্যাসেঞ্জার থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়ানো হয়েছিল।
ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সরকারের ওই সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ভোলার সংঘাতের ঘটনা মোকাবিলায় পুলিশ স্থানীয় সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বোরহানউদ্দিনে পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হচ্ছে, তার খবর সাংসদ আলী আজম মুঠোফোনে পাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি এলাকায় না থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সাংসদকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করলে জানান, তিনি ঢাকায় আছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি হেলিকপ্টারে ভোলায় যান। কিন্তু তার আগেই সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে সাংসদ আলী আজম বলেন, শুক্রবার থেকেই তিনি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পুলিশ ও বিশিষ্ট আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর উল্লেখ করে তিনি সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে জেনেও কেন ঢাকায় ছিলেন—এই প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেন, সংঘাতের ঘটনাটি ছিল অপ্রত্যাশিত, চিন্তার বাইরে। ধারণা ছিল, বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
সূত্র : প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here