নিউজবাংলা ডেস্ক:

তোমার কথা বলা যেন মধুবালা, হাঁটাচলা সোফিয়া লরেন’- নিজের কল্পিত প্রেমিকাকে নন্দিত গায়ক অঞ্জন দত্ত এভাবেই গানে গানে খুঁজে নিয়েছিলেন। এভাবে আরও অনেক কোটি পুরুষ নিজের প্রেমিকাকে দেখতে চেয়েছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রে ইতালিয়ান দেবী বলে খ্যাত সোফিয়া লরেনের সৌন্দর্যে, ব্যক্তিত্বে।

অভিনয়ের খ্যাতি তার দুনিয়াজোড়া। ইতালীয় বংশোদ্ভূত হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেনের আজ জন্মদিন। এবার তিনি ৮৬ বছরে পা রাখলেন। তার জন্মদিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নানা সংবাদ ও ফিচার আয়োজন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাকে স্মরণ করছেন ভক্তরা।

১৯৩৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া লরেন। রোমের একটি হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া। তার মা রোমিলদাকে বিয়ে করতে আগেই অস্বীকার করেছিলেন বাবা রিকার্ডো। তাই জন্মের ক’দিন পরই সদ্য জন্মানো কন্যা সোফিয়াকে নিয়ে তার মা আশ্রয় নেন ইতালির একটি বস্তিতে। তখন অবশ্য তার নাম ছিল সোফিয়া সাইক্লোন। সিনেমায় গিয়ে নাম বদলে তিনি সোফিয়া লরেন হয়ে যান।

চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কেটেছে মা এবং মেয়ের সেই সব দিন। সেই অবস্থা অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যখন চারদিকে দেখা দেয় অভাব। সোফিয়ার ভাষ্যে, ‘বেশির ভাগ সময়ই না খেয়ে কাটাতে হতো আমাদের। মা আর ছোট বোন মারিয়ার মুখে সব সময়ই থাকতো বিষণ্নতার ছায়া। সেসব দিন মনে পড়লে আমার বুক ভেঙে কান্না আসে।’

অভাবের সঙ্গে জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে এলেও বিধাতা তাকে উজার করে দিয়েছেন সৌন্দর্য ও গুণ। অনিন্দ্য সুন্দরী সোফিয়ার ভাগ্যটা বদলে যায় মাত্র ১৪ বছর বয়সেই। সে সময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের মধ্যে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

ওই প্রতিযোগিতায় সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন এবং পরে তাকে বিয়েও করেন। বলা হয় পন্টির সঙ্গে পরিচয়টাই ভাগ্য বদলে দিয়েছিল সোফিয়া লরেনের। তিনি হয়ে উঠেছিলেন ষাট ও সত্তর দশকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের অন্যতম একজন। তাকে বলা হতো সৌন্দর্য ও যৌন আবেদনের প্রতীক। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ৩৭ বছর বয়সী পন্টিকে বিয়ে করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন সোফিয়া।

১৯৫০ সালে মুক্তি পায় সোফিয়া অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম ক্যাপাটাজ’। পরবর্তী সময়ে ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘হাউসবোট’, ‘ইয়েস্টারডে, টুডে অ্যান্ড টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’, ‘এল সিআইডি’, ‘দ্য ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’, ‘ম্যান অব লা মাঞ্চা’, ‘দ্য কাসান্ড্রা ক্রসিং’, ‘এ স্পেশাল ডে’সহ অসংখ্য ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এ অভিনেত্রী।

এ অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারকে সাফল্য, প্রশংসা, পুরস্কারের ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে প্রখ্যাত ইতালীয় চিত্রনির্মাতা ভেট্টোরিও ডি সিকা পরিচালিত ‘টু উইমেন’ ছবিটি। এখানে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬২ সালে অস্কার জিতেছিলেন সোফিয়া লরেন। বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হিসেবে তিনিই প্রথম সেই অস্কার পেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ডি সিকা পরিচালিত ‘ম্যারেজ ইটালিয়ান স্টাইল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্যও অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে সোফিয়া লরেনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। সেই ছবিও দারুণ প্রশংসিত।

২০০৭ সালে তিনি স্বামী কার্লো পন্টিকে হারান। এরপর থেকে তিনি বাস করছেন তার দুই ছেলে কার্লো পন্টি জুনিয়র ও এডওয়ার্ড পন্টির সঙ্গেই।

মা-বাবার পথ অনুসরণ করে এডওয়ার্ড পন্টিও চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। ‘অরোরা’, ‘বিটুইন স্ট্রেঞ্জারস’সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রশংসিত সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি।

ক্যারিয়ারে একবার অস্কার, বেশ কয়েকবার গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে সম্মানিত হওয়া সোফিয়া লরেনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।vv

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here