সুজন বিশ্বাস: আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অগ্নিকাণ্ড একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই এখানে সেখানে আগুন লাগার খবর পড়তে হচ্ছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

আগুন যে কত ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা একটি ঘটনা জানলেই বুঝতে পারবেন। ১৯০৬ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে তিনদিন ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শহরের প্রায় ৫০০ ব্লক। এই আগুনে গৃহহীন হয়েছিল প্রায় ৪ লাখ মানুষ এবং হতাহত হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার মানুষ। এই ভয়ঙ্কর আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল শহরের অদূরে ঘটে যাওয়া ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পরে। সেখানে ভূমিকম্পের কারণে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয়েছিল ভূমিকম্প পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের কারণে।
আমাদের দেশেও আমরা পরপর বেশ কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। তাজরিন ফ্যাশানের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা আমরা ভুলে যাইনি। এরই মধ্যে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৮০ জন এবং বনানীর একটি ভবনে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৬ জন মানুষ। এছাড়া ডিএনসিসি মার্কেটের আগুন, কারওয়ান বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারের আগুন আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে গ্যাস এবং প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়। এই গ্যাস এবং বিদ্যুতের যেকোনো একটিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা যায় অনেকাংশে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বর্তমান অভিযানে যে বাস্তবতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তা খুব সুখকর নয়। ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। সাধারণ জনগণের নেই অগ্নিসতর্কতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, নেই প্রয়োজনীয় ফায়ার হাইড্রেন্ট। ফায়ার ট্রাক কিংবা অ্যাম্বুলেন্সকে রাস্তায় আগে যেতে দেওয়ার সংস্কৃতি এখনো তৈরি হয়নি আমাদের মাঝে। তাছাড়া অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে কোনো কোনো জায়গায় অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে অনেক সময়।
বৈদুতিক শকসার্কিট থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ গ্যাসের সঙ্গে মিশে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করতে পারে। তাই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় ভবন তৈরির সময় গ্যাস এবং বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বয়ংক্রিয় কিংবা নিয়ন্ত্রিত ভালব বসানো যেতে পারে, যা দিয়ে প্রয়োজনে গ্যাস প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। তাছাড়া ভবনে ইমার্জেন্সি বহির্গমন লাইট স্থাপন করা যায়, যাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার পরেও সবাই ভবন থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এগুলোই একমাত্র পন্থা নয়, প্রকৌশলীরা হয়তো আরও যুগোপযোগী প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারেন। তবে এইসব প্রস্তাবনার বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ধীরে ধীরে জাতিকে এরকম বড় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে তোলা যায় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here