গত ১২ জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক জানালেন, তিনি জুম অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন তিনি। প্রথম বর্ষে তাঁর কোর্সে মোট ৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে অংশ নেন ২২ জন। এর মধ্যে এই শ্রেণির ১০ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাস করার মতো যন্ত্রই (ডিভাইস) নেই। তৃতীয় বর্ষে ৪৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ জন অংশ নেন। আর স্নাতকোত্তরে ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন অংশ নেন। যাঁরা ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, মূলত সবাই মুঠোফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন।
করোনাকালে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাসের চিত্রটি কমবেশি এমনই। বিভাগভেদে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না। অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত জুম অ্যাপ ব্যবহার করেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য বলছে, ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সমস্যার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগেরও সমস্যা হচ্ছে।
এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই, শুধু সেসব শিক্ষার্থীর নির্ভুল তালিকা ২৫ আগস্টের মধ্যে দিতে ইউজিসির কাছে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছে ইউজিসি। অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ডিভাইস কেনার সামর্থ্য না–থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়ার পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা দিয়েছে, সবার তালিকা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট খরচ সহজলভ্য করতেও আলোচনা চলছে।
অনলাইন ক্লাসের চিত্রটি বোঝার জন্য খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগে একটি ক্লাসে ৪০ জনের মধ্যে ঈদের আগে ২০ থেকে ২২ জন অংশ নিতেন। ঈদের পর এখন ২৭ জনের মতো অংশ নেন। কিন্তু ইন্টারনেট সমস্যার কারণে অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বিকল্প হিসেবে ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীদের ই-মেইলে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা প্রথম আলোকে বলছিলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরুর পর ঈদুল আজহার আগে তিনি দুটি ক্লাস নিয়েছিলেন। একটি বর্ষে ১৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জনের অনলাইনে ক্লাস করার মতো যন্ত্র বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এই ৪০ জন বাদ দিয়ে বাকি যাঁদের যন্ত্র আছে, তাঁদের মধ্যে দেখা গেল, একটি ক্লাসে প্রথমে ১২০ জন অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত ৯২ থেকে ৯৩ শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিলেন। আরেকটি ক্লাসে প্রথমে ১৪০ জন যুক্ত হলেও শেষে থাকেন ৭০ জনের মতো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি অর্ধেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকেন বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ শতাংশের বেশি উপস্থিত থাকেন। তবে কোনো কোনো বিভাগে বেশি থাকে।
শহরের বাইরে মফস্বল এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপস্থিতিও অর্ধেকের মতো।
শহরের বাইরে মফস্বল এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপস্থিতিও অর্ধেকের মতো।
গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪টি বিভাগের মধ্যে ২৮টি বিভাগে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। এর মধ্যে স্থাপত্য বিভাগ ছাড়া বাকিগুলোতে উপস্থিত থাকছেন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। স্থাপত্য বিভাগে বেশি হয়।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি ৩টি ক্লাসের তথ্য তুলে ধরে বলেন, মোট ৫২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১টি ক্লাসে সর্বোচ্চ ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি ২টি ক্লাসের ১টিতে ২১ জন এবং আরেকটিতে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন।
যাঁরা অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না, তাঁদের মূলত অনলাইনে ক্লাস করার মতো যন্ত্র নেই, আবার থাকলেও অনেকের ইন্টারনেট খরচ বহনের সামর্থ্য নেই—এই অভিজ্ঞতা জাবির একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের। তাঁর পরামর্শ, অনলাইন ক্লাস যদি পুরোপুরি ফলপ্রসূ করতে হয়, তাহলে যাঁদের ডিভাইস নেই বা ইন্টারনেট খরচ বহনের ক্ষমতা নেই, তাঁদের সেসব ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
নীতিমালা তৈরি করার পর গত শনিবার থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বুয়েট)। প্রথম দুই দিনের তথ্যের ভিত্তিতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে বিভাগভেদে ৭০-১০০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষকের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস (যন্ত্র) নেই, তাঁদের তা সরবরাহ করছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। আর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ডিভাইস কিনতে সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে সুদমুক্ত ঋণসুবিধা।