
নিউজ বাংলা ডেস্ক/ মোস্তফা কামাল: আজ বাইশে শ্রাবণ । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনন্য সাধকপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। মহাকালের চিরচেনা পথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। বিশ্বব্যাপী রবিভক্তদের কাছে এ দিনটি শোকের, শূন্যতার। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এদিন।
রবীন্দ্রকাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যুবন্ধনা করেছেন তিনি এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান ॥’
কাগজের বুকে আঁচড় কেটে নির্মিত সমুদ্রসম রচনাই শুধু নয়, রবীন্দ্রনাথের কীর্তি আরো বহুদূর বিস্তৃত। আটপৌরে দিনযাপনে আর আহামরি সব আয়োজনে চেতনে-অবচেতনে তাঁর সরব উপস্থিতি।
কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে বিশ্বকবির বহুমূল্য স্মৃতিচিহ্ন। রবীন্দ্রনাথের লেখা বহু বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম সৃষ্টি হয়েছে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে। প্রয়ানদিবসে কুঠিবাড়ী মিউজিয়ামে প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের আয়োজনে একেবারেই নিভৃতে স্মরণ করা হয় কবিগুরুকে।
বাঙালিকে বিভাজনের বিলেতি চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’ প্রাণের দেশে সোনাঝরা দিন সর্বজনীন হয়নি আজো। তবু বাইশে শ্রাবণে দিনভর চলে বাঙালির সৃষ্টিশীল উৎকর্ষের উদযাপন।
জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সাধের শান্তিনিকেতনে। সেদিন তার কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।
আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি।’ পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। অগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ে। ৬ অগস্ট রাখিপূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে জপ করা হলো ব্রাহ্মমন্ত্র ‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম…’ ‘…তমসো মা জ্যোতির্গময়…’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যুপথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃতআলোকে।
নিউজ বাংলা