মো: মোশারফ হোসাইন: ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষের শতকরা সাতাশি ভাগ স্বপ্ন কোনো না কোনো ভাবে বাস্তবায়িত হয়ে যায়, বাকি তেরো ভাগ বাস্তবায়িত হয় না (অধিকাংশই ধর্মের কারণে)। তবে কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনে কিছুই বাকি থাকে না তারা শতভাগই পেয়ে যায়। এ সংখ্যা টা অবশ্য খুবই কম, দশ হাজারে এক জন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ Dr. Konils and Dr. James Tinddle এর মতে পৃথিবীতে এ System এর Exception পাওয়া যায় না। আমি মনে করি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) এদের একজন।
কবিগুরু একজন সফল সন্তান, ভাই, পিতা, স্বামী, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক কোন গুণটা নেই যা রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা দেয়নি। কবি জন্মেছিলেন জমিদারের ঘরে এবং ছিলেন জমিদার। এ জন্য আইরিশ গবেষক টি. মার্টিন বলেছেন “বিশ্বে যে কজন মানুষ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন এবং সোনার চামচ সারা জীবন মুখে রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রথমে থাকবে বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ।” আমার মনে হয় গবেষক ভুল বলেছে এই যুক্তি দেওয়ার মতো মানুষ পাওয়া দুষ্কর।কবিকে নিয়ে ও তার রচনা নিয়ে নানা জনের নানা মত। আমার ধারণা রবীন্দ্রসাহিত্যের তিন শ্রেণির পাঠক আছে।
শ্রেণি-১: এরা রবীন্দ্রনাথকে মানুষ মনে করেন না।ঈশ্বর মনে করেন। রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠ করেন বা রবীন্দ্রনাথের গান করেন ঈশ্বরের মন্ত্রপাঠের মতো।
শ্রেণি-২: এরা গবেষক। গবেষনার জন্যেই এদের পাঠ। এদের কেউ কেউ রবীন্দ্রজীবনী লেখার জন্য পাঠ এবং নোট করেন। নোট বেশি পাঠ কম।
শ্রেণি-৩: এই শ্রেণিতে আছে আমার মতো অভাজনরা।এরা চায় রবীন্দ্রনাথের করুণধারায় নিজেকে সমর্পণ করে আনন্দে অভিভূত হতে।
রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ কয়েক মাস অনেক ঝামেলায় কেটেছিল। কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রয়াত হয়েছিলেন কবি। জীবনের শেষ প্রায় এক বছর সময় তাঁর কেটেছিল রোগশয্যায়। ওই সময়ে ঠিক কী কী ঘটেছিল কবির জীবনে, তাঁর অসুখটা ঠিক কী ছিল এগুলো যদিও কবির আত্মীয়-বন্ধুরা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, তবে অনেক সাধারণ মানুষই সেটা বিস্তারিতভাবে জানেন না। জোড়াসাঁকোর মহর্ষি ভবনের দোতলায় পাথরের ঘর বলে পরিচিত রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণকক্ষ। কিন্তু অনেকের কাছেই এই তথ্য অজানা যে, পাথরের ঘরের পুবদিকের বারান্দায় তাঁর অস্ত্রোপচারের জন্য রীতিমতো একটা অপারেশন থিয়েটার বানানো হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে যখন তিনি একবার কিডনির সমস্যায় ভোগেন। তার আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয় একের পর এক ঘটনা। শান্তিনিকেতন থেকে সে বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বর পূত্রবধূ প্রতিমা দেবীর কাছে গিয়েছিলেন দার্জিলিং পাহাড়ের কালিম্পং-এ। সেখানেই ২৬ তারিখ রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি। দার্জিলিংয়ের সিভিল সার্জন বলেছিলেন তখনই অপারেশন না করলে কবিকে বাঁচানো যাবে না। প্রতিমা দেবী এবং মৈত্রেয়ী দেবী তখনই অপারেশন না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বলছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ ও সাহিত্যিক রামকুমার মুখোপাধ্যায়। একটু সুস্থ হওয়ার পরে পাহাড় থেকে নামিয়ে কবিকে কলকাতায় আনা হয়। তারপরে তিনি ফিরে যান শান্তিনিকেতনে।
বেশি কথা না বলে আজ এখানেই শেষ। কবি ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ (৭ই আগস্ট, ১৯৪১) ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। প্রয়াণ দিবসে কবিকে স্মরণ করছি প্রাণভরে, পরপারে ভালো থাকুন হে কবি।
লেখক: সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যাল, জয়পুরহাট।