ঢাকা: গণভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বহুল আলোচিত সংলাপ শেষ হয়েছে। সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এখানে অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ওনারা কথা বলেছেন। আমাদের সিনিয়র নেতারাও কথা বলেছেন। সেখানে খুব ভদ্রভাবে শালিনভাবে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। আমাদের এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচনের বিষয়ে আস্বস্ত করা হয়েছে। সরকার কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এবং আমরা কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, ‘সভা-সমাবেশ চলবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তবে, রাস্তা বন্ধ করে কোনও সভা-সমাবেশ না করে একটা মাঠে হতে পারে। অনেক মাঠ আছে। ঢাকায় মিটিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, দরকার হলে আমরা একটি কর্নার করে দেবো। সেখানে যারা ব্যবহার করবেন, তাদের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে। এটা একটা মেনটেইন্সে থাকবে। বিষয়টি নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এটা তাদের তিন নম্বর পয়েন্ট হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।’

খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। সংলাপে এটা আসতে পারে না। খালেদা জিয়াকে যে দুটি মামলায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলা। সুতরাং এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের ছয় নম্বর দফা হলো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবেন এবং নির্বাচন মনিটরিং করবেন। এই ব্যাপারেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমাদের সাপোর্ট থাকবে। আর ইভিএমের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি। তবে, এবার হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যাবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে মামলা। তারা রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে একটা প্রশ্ন তুলেছেন। এই ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের মামলার তালিকা পৌঁছে দিতে। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে বহু প্রতীক্ষিত সংলাপের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী শাসনামলের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।

স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে উন্নয়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান। সবাই মিলে এই উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

গণভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬ টার পর সরকারের সঙ্গে সংলাপের উদ্দেশে গণভবনে গিয়ে পৌছান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তাদের অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনের বৈঠকখানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্বের সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন। এর পরপরই সংলাপ শুরু হয়।

এর আগে, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে বেইলি রোডের ড. কামালের বাসা থেকে রওয়ানা দেয় ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে গণভবনে পৌঁছার পর শুরুতেই ভেতরে ঢোকেন ড. কামাল হোসেন। পরে একে একে অন্যরা ঢুকতে থাকেন। কাছাকাছি সময়েই সংলাপে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকেও গণভবনে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

প্রথমেই গণভবনে প্রবেশ করেন দুই বিএনপি নেতা ড. মঈন খান ও জমিরউদ্দিন সরকার। এরপর এক গাড়িতে প্রবেশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও সাম্যবাদী দলের প্রধান দিলিপ বড়ুয়া।

এরপর একে একে গণভবনে প্রবেশ করেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আ ব ম মোস্তফা আমীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের জন্য চিঠি দিলে পরদিন ২৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, তারা সংলাপে বসতে রাজি। ৩০ অক্টোবর সকালে সংলাপের দিনক্ষণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ যান ড. কামালের বাসায়।

সংলাপের জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১৬ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয় আওয়ামী লীগকে।

সংলাপের আড়াই ঘণ্টা আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে শেষ মুহূর্তে যোগ করা হয় আরও পাঁচজনের নাম।

নতুন যোগ হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন বিএনপির ও তিন জন গণফোরামের। বিএনপির দুই নেতা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অন্যদিকে, গণফোরামের তিন জন হলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিকুল্লাহ। তবে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংলাপে অংশ গ্রহণ করেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here