ঢাকা: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গতকাল ৩০ হাজার ২৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ২৮টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এসব প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ২৪ হাজার ৮৫৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়ন, সংস্থার ৫৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে এবং ৪ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে সংস্থান হবে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গত রবিবার একনেক অনুমোদন দিয়েছে ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। দুদিন পরই অনুমোদন পেল আরো ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প। তাই বলে এটাকে নির্বাচনী একনেক বলা যাবে না। কেননা অর্থবছরের এ সময়টাতে এমনিতেই প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ একটু বেশি হয়। এ সময়টাকে বলা যায় প্রকল্পের মৌসুম। তবে অন্যান্য বছর যে-সংখ্যক প্রকল্প প্রস্তুত হয়, তার চেয়ে এ বছর একটু বেশি স্পিডে প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে। আমরা কোনো তাড়াহুড়ো করে প্রকল্প পাস করছি না, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে দেখে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করছি। সুতরাং গুণগত মান না থাকার কোনো মানে নেই।
একনেকের গতকালের বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বিনির্মাণ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
গতকালের একনেক বৈঠকে দুটি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মান্দা’ শীর্ষক প্রকল্পটির মূল ব্যয় ৭৪ কোটি ৬২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা করা হচ্ছে। মেয়াদও বাড়ছে এক বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট প্রকল্পটি। প্রথম সংশোধিত ব্যয় ৭২ কোটি ৯২ লাখ থেকে ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে এখন মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
একনেকে অনুমোদন হওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা, বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন, চা বাগানকর্মীদের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (ষষ্ঠ পর্ব), বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণ, ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্থাপন ও মাদারীপুরে সরকারি অফিসগুলোর জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ।
এছাড়া নির্বাচিত নয়টি সরকারি কলেজের উন্নয়ন, গোপালগঞ্জের শেখ রাসেল উচ্চবিদ্যালয় ও ঢাকা সূত্রাপুরের শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, চট্টগ্রাম-খুলনা-রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, র্যাব ফোর্সের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম জোরদারকরণ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ বিশেষ ধরনের পন্টুন নির্মাণ ও স্থাপন, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ), বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলা) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন, বাঙ্গালী-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ এবং ইমার্জেন্সি মাল্টিসেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেকের গতকালের সভায়।
এ সভা শেষ সভা কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এটিই শেষ সভা, তা বলা যায় না। তবে হাতে এখনো প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু আমিও তো নির্বাচন করব। তাই এলাকায় যেতে হবে। একনেক হলেও আমি নিজেই কতটা সময় দিতে পারব কি পারব না, সেটি বড় কথা। তবে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হলো। মন্ত্রণালয়গুলোর উচিত এসব প্রকল্প মানসম্মতভাবে বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অবশ্যই আমরা রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড। ফলে এত উন্নয়ন করেছি, যাতে মানুষ অন্তত ভোট দিতে গিয়ে আমাদের বিপক্ষে ভোট দিতে না পারে।