নিউজ বাংলা ডেস্ক :

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো। তবে এই উত্তেজনা শুরু হয় গত বছর, ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর। গত বছরের মে মাসে চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেসময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সদ্য-সাবেক বৃটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ড্যারোচ এক মেমোতে লিখেছেন, ওবামার প্রতি বিদ্বেষ থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওবামাকে খেপিয়ে তুলতেই তিনি চুক্তি থেকে বের হয়ে যান। রোববার মেমোটি ফাঁস করেছে বৃটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।  চুক্তিটিকে ওবামা প্রশাসনের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।
স্যার কিম ড্যারোচকে উদ্ধৃত করে দ্য মেইল জানায়, এটি ইচ্ছাকৃত ক’টনৈতিকভাবে ক্ষতিকর একটি পদক্ষেপ ছিল।

চুক্তিটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে কোনো কৌশল নির্ধারিত ছিল না ট্রাম্প প্রশাশনের। মেমোটি লেখা হয় তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে থাকার অনুরোধ করতে ওয়াশিংটন সফর করে আসার পরপরই মেমোটি লিখেন ড্যারোচ। নথি অনুসারে, জনসন ওয়াশিংটনে সফর থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার পর ড্যারোচ লিখেন, ব্যক্তিগত কারণে ইরানের সঙ্গে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে গেছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন। চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ সীমিত রাখবে ইরান। কেবল পারমাণবিক চুল্লি চালাতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হবে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটি। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক মহল। বিশ্ববাসী চুক্তিটিকে ওবামা প্রশাসনের অন্যতম সফলতার নজির হিসেবে দেখে। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয় ও ওই বছরের নভেম্বরে ইরানের ওপর ফের আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা। এতে চরম অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয় ইরান। বাড়তে থাকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে দুই দেশ।

নথিতে বলা হয়, চুক্তি থেকে সরে আসার ব্যাপারে বিভক্ত ছিলেন ট্রাম্পের উপদেষ্টারা । এছাড়া চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরবর্তী দিনগুলোয় করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে কোনো সুষ্ঠু কৌশল ছিল না তাদের। মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপের মিত্রদের সঙ্গে কীভাবে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবে তা নিয়েও কোনো পরিকল্পনা ছিল না ট্রাম্প প্রশাসনের।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেও স্যার কিম ড্যারোচের একটি গোপন ক’টনৈতিক নথি প্রকাশ করে দ্য মেইল। তাতে ট্রাম্পকে ‘অগোছালো ও অদক্ষ’ বলেছিলেন তিনি। ওই নথি প্রকাশের পরপর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়ন দেখা দেয়। ট্রাম্প জানান, তিনি ড্যারোচের সঙ্গে কাজ করবেন না। তাকে একজন ‘অত্যন্ত  বোকা ব্যক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিতর্কের মধ্যে পদত্যাগ করেন ড্যারোচ। এরপর গোপন ক’টনৈতিক মেমো প্রকাশ করের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে সতর্ক করে স্থানীয় পুলিশ বিভাগ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। জানায়, এমন নথি প্রকাশ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন আইনের অধীনে বিবেচিত হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here