নিউজ বাংলা ডেস্ক: জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, কবি আল মাহমুদ যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই ঈর্ষণীয় সফল হয়েছেন। কবিতা, প্রবন্ধ, কাব্যগ্রন্থ, শিশু সাহিত্যসহ সকল ক্ষেত্রেই তিনি সফল একজন মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। লোক লোকান্তর, কালের কলস ও সোনালী কাবিন এই মাত্র তিনটি গ্রন্থের মাধ্যমে অনেক আগেই আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। নিজের অবস্থানে তার সাফল্য তাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে কবি আল মাহমুদ পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। বাংলা একাডেমির মহা-পরিচালক মাহমুদ শাহ কোরেশীর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আল-মাহমুদ পরিষদের আহবায়ক কবি আসাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, কবি আল মুজাহিদী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মুস্তাফা জামান আব্বাসী, কবি মতিন বৈরাগী, কবি হাসান হাফিজ, কবি শাহীন রেজা, কবি আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, কবি আল মাহমুদ মারা গেলেও তার সাহিত্যকর্ম তাকে অমর করে রাখবে। তিনি তার নিখুঁত লেখনির মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন মর্দে মুমিন। সাদা সিদে চিন্তাধারার মানুষ। আল মাহমুদের সাহিত্য ও কাব্যে যে শক্তি সেই শক্তি প্রসারিত করতে পারলে দেশ আলোকময় হয়ে উঠবে। কবির কাব্যিক শক্তিকে দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
কবি আল মুজাহিদী বলেন, কবি আল মাহমুদ একটি শক্তির নাম। তিনি অন্তর অন্তরিক্ষ থেকে মর্তে এসেছেন। সমাজ এবং সমাজের পরিসরকে তিনি খুব নিকট থেকে দেখেছেন। আর এটা তিনি তার লেখনীতে প্রকাশ করেছেন। এমনকি অবহেলিত মানুষের দুর্দশা নিখঁতভাবে তুলে ধরতে একটুও কার্পন্য করেননি। এতেই বুঝা যায় তিনি কত বড় হৃদয়ের অধিকারি ছিলেন। সোনালী কাবিনের মাধ্যমে কবি বিশ্বের দরবারে অমর হয়ে থাকবেন।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, আল মাহমুদ ছিলেন মৌলিক কবি। তার সমস্ত লেখা বাংলাদেশের চিন্তার সাথে মিশে আছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই আল মাহমুদের অবদান রয়েছে। তিনি তার লেখনি দিয়ে প্রমান করেছেন তিনি বিরল কবিদের একজন। কিন্তু রাষ্ট্র তাকে সে সম্মান দেয়নি। মৃত কবি আল মাহমুদ শহীদ মিনারে না যেতে পারলেও বাংলাদেশের মানুষের অন্তুরে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
ড. মঈন খান বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন এই উপমহাদেশের শক্তিমান কবি। আধুনিক বাংলার সবচেয়ে শক্তিমান কবি আল মাহমুদ। তিনি মৃত্যুবরণ করেও বেঁচে আছেন সবার কাছে। যারা দেশকে ভালোবাসেন যারা সাধক তাদের কাছে আল মাহমুদের মৃত্যু নেই। মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রাখার শক্তি ছিল তার লেখনীতে। তিনি পাঠককে তার কবিতার মায়াবী জালে জড়িয়ে নিতে পারতেন। আল মাহমুদ নিজে একটি উদারতার জগত তৈরি করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাস্তবতার নিরিখে প্রতিবাদী কবি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী বলেন, কবি আল মাহমুদকে চিনতে হলে তার লেখা পড়তে হবে। তার লেখনিতে আমি আলিফকে প্রত্যক্ষ করেছি। আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করেছি। মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রত্যক্ষ করেছি। তাঁর লেখনিতে এক অন্যরকম শক্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, কবি আল মাহমুদকে যারা সম্মান করেনি, ভালো বাসেনি তারা একঘরে হয়ে গেছে। এরা কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও সম্মান করেনি। তারা ছাড়া আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষ আল মাহমুদকে অন্তর থেকে ভালোবাসি।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, কবি আল মাহমুদ আমাদের গৌরবের। তার তিরধানে সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তার সৃষ্টি শেষ হয়নি। আধ্যাতিকতায় তিনি সুপুরুষ। আল মাহমুদ সাতটি তারার তিমির। তিনি ছিলেন এই সময়ের শ্রেষ্ঠ মানুষ।
তিনি বলেন, কবির মৃত্যুতে আমরা সত্যিকারের দরিদ্র হয়ে গেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি। এটা আমাদের রাষ্ট্রের দরিদ্রতা। কবি আল মাহমুদ ছিলেন ঐক্যের কবি। তার মৃত্যুতে কবিতার শক্তির ঐক্য গড়ে উঠেছে। তার অবদান কখনো ম্লান হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here