ঈশ্বর কি ঘুমোচ্ছেন?
সভাপতির ধমকে, বেশ কিছুক্ষন যাবৎ
সভায় পিনপতন নীরবতা।
হঠাৎ পাবলো নেরুদা বললেন-
পাবলো নেরুদা: ঈশ্বর কি ঘুমোচ্ছেন?
লর্ড বায়রন: ভালো প্রশ্ন।
বব ডিলন: এই প্রশ্নের মানে কী?
রবি ঠাকুর: সভার বিষয় এটা নয়।
রিচার্ড উইলবার: উত্তরটা কিন্তু জানা দরকার।
সভাপতি চুপ, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন।
সিসিলিয় মেরিলিস তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন,
আমার বুকের জামার
একটা বোতাম ছিঁড়ে গেছে।
আর একটা বোতাম ছিঁড়লে বুক দেখা যাবে।
ঈশ্বর কি ঘুমোচ্ছেন?
ইভান বুনিন হাসতে হাসতে বললেন-
এটা অবশ্য কবিতার খোরাক হবে।
কাকামোনিন ন বেট্টা: আমাদের নারীদের জন্য এটা অপমানের।
বিসেন্তে আলেকজান্দ্রে: তা ঠিক, বিষয়টা অন্য, দুঃসময়ের।
গাব্রিয়েলা মিস্তাল: আমি কি একটি
কবিতা আবৃত্তি করতে পারি?
মাইকেল অ্যাঞ্জেলা: আমরা এখানে-
কবিতা আবৃতি করতে আসিনি।
স্টিফেন ক্রেন: ঈশ্বর ঘুমোচ্ছেন না জেগে আছেন,
এ ব্যাপারেও কথা বলতে আসিনি নিশ্চয়ই।
শেখ সাদী: সভাপতি উত্তর দিলেই সব চুকে যায়।
হোসে মার্তি: ঠিক বলেছেন।
হুমায়ূন আজাদ: কী অদ্ভুত! যার কোনো অস্তিত্ব নেই,
তাকে নিয়েই কথা হচ্ছে।
সভাপতি কিছুটা বিব্রত।
ওমর খৈয়াম: আমরা কি আমাদের মূল বিষয়ে
ফিরে যেতে পারি না?
ফেরদৌসি: ৯০০ বছর আগেও আমি এই প্রশ্ন করেছিলাম।
উইলিয়াম মিলস: কী প্রশ্ন?
ফেরদৌসি: এই যে, ঈশ্বর কি ঘুমোচ্ছেন?
পাবলো নেরুদা: তারপর?
ফেরদৌসি: সভাকক্ষ থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়।
সভাপতি কটমট করে তাকালেন।
হাফিজ: আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে চাচ্ছি।
কাজী নজরুল: আমি আপনার সাথে আসছি।
জেমস ফেল্টন: আমিও আপনাদের সাথে যাব।
সভাপতি ভীষণ বিরক্ত।
একজন হাত উঠিয়ে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
সভাপতির চোখে চোখ পড়তেই,
কাজী বিভাস: আমার প্যান্টের বেল্ট ছিঁড়েছে গতবছর।
এ বছর বোতামও ছিঁড়ে গেছে।
সভাপতি ও অন্যরা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছেন;
সভায় পিনপতন নীরবতা।
কাজী বিভাস: যেকোনো সময় প্যান্ট খুলে যাবে।
ঈশ্বর কি ঘুমোচ্ছেন?
সভাপতি: তুমি কে? এখানে কীভাবে ঢুকলে?
কাজী বিভাস: জি, আমি দেউলিয়াদের মিছিলের সাথে এসেছিলাম।
হুমায়ূন আহমেদের পাশ নিয়ে ঢুকে গেছি।
সভাপতি: হুমায়ূন আহমেদ কোথায়?
কাজী বিভাস: তিনি বাইরে বাদাম চিবুচ্ছেন আর
শেক্সপিয়ার ও মির্জা গালিবকে
ভূতের গল্প শোনাচ্ছেন।
স্টিফেন ক্রেন: কী হচ্ছে এসব?
এফরেইন হুয়েতা: আমারও একই প্রশ্ন।
জাভিয়ের ভিয়রুভিয়া: আমিও আর জীবিত নই
মৃত আর দংশিত। ( তাঁর নিজের কবিতার চরণ )
সভাপতি: আপনি চুপ করুন।
সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে
কাজী বিভাস: উত্তর পেলাম নাতো?
সভাপতি: কীসের উত্তর?
সিসিলিয় মেরিলিস: ঈশ্বর ঘুমোচ্ছেন কি না?
সভাপতি: চুপ, এক দম চুপ।
সভাপতি টেবিল চাপড়িয়ে, সভা আজ এখানেই…
আচমকা ঘুম ভেঙে দেখি,
অগ্নিমূর্তি বউ;
হাতে যাবতীয় ইউটিলিটিজ বিলের কপি,
বাড়িওয়ালার নোটিশ আর
একটা বাজারের ব্যাগ।
পাশের রুমে কচি কন্ঠে কান্নার আওয়াজ…
আমি তবুও সেইদিনের অপেক্ষা করছি,
যেদিন উপাসনালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আর স্বয়ং ঈশ্বর বিপ্লবী কবিতা পড়বেন।
——————————–
কাজী বিভাস
৮ জুলাই, ২০২১