হুমায়ুন কবির সোহাগ, ঝিনাইদহ

দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যাক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো এক প্রতারক। অবশেষে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই প্রতারককে আটক করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের নামে আমলা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পপতিসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করতো মোহাম্মদ শরীফ মিয়া নামে এই প্রতারক । প্রতারক শরীফের নামে প্রতিদিন এ ধরনের একাধিক অভিযোগ পুলিশের নিকট যায়।

কালীগঞ্জ হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শামীমা শিরীন লুবনা (সাবেক)কর্মরত থাকা অবস্থায় সরকারি টাকা আত্নসাতের খবর পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। করোনার সময়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হোটেলে না থেকেও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা এবং হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে সাবেক এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর না দিয়ে মহামারীর দুর্যোগপূর্ণ সময়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার লুবনা দুর্নীতি করেন। তার এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে
কালীগঞ্জের সকল পেশাজীবী মানুষ ঝাড়ু মিছিল করে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে।দুদকে এ বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। আর ওই সময় দুর্নীতির অভিযোগ ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশিত হলে ময়মনসিংহ জেলার গফরগা উপজেলার পরশিপাড়া গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে শরীফ মিয়া দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ডাক্তার লুবনার কাছে ফোন করে। ফোনে জানানো হয় আমি খুলনা দূর্নীতি দমন কমিশনের অফিসার বলছি। আপনার নামে আমাদের দুদক অফিসে মামলা হয়েছে আর এতে করে আপনার চাকরি চোলে যাবে মর্মে হুমকি দেয়। ২ লাখ টাকা দিলে মামলা খারিজ করে দিবে বলে জানানো হয়। তখন ডাক্তার শামীমা শিরীন লুবনা নিজের আত্নসস্মানের ভয়ে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা রকেট, বিকাশও নগদ নাম্বারে তিন কিস্তিতে টাকা প্রদান করেন। এক পর্যায় ডা:লুবনার স্বামী ডাক্তার আব্দুল্লাহিল কাফী বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় অঞ্জাত ব্যাক্তিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ২৮/৯/২০২১ ইং তারিখে। মামলার এজাহারে বলা হয়, ০১৭২৬-১৭২৭৩০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে ডাক্তার লুবনার কাছে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করেন (০১৭৩৪-১০০০৭০) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে। টাকা পাঠানো হয় ০১৭১৯-৭৯৬২৭১ এই ফোন নাম্বারে। কিন্তু টাকা পাঠানোর পর নাম্বার ২টি বন্ধ পেলে ডাক্তার লুবনার সন্ধেহ হয় ও খুলনা দুদক অফিসে খোজ নিয়ে দেখেন তার বিরুদ্ধে কোন কিছুই হয়নি এবং দুদক কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এক পর্যায়ে ডাক্তার লুবনার স্বামী কাফী বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।ধারণা করা হচ্ছে, ডাক্তার শিরিনা শারমিন লুবনা নিজের দুর্নীতির বিষয়টিকে আড়াল করতেই
তড়িঘড়ি করে সত্যতা যাচাই না করেই প্রতারণার শিকার হন। উল্লেখ্য, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিগঞ্জ হাসপাতালের একজন স্টফ জানান ২০২০- ২০২১ অর্থবছরে করোনাকালীন বরাদ্দকৃত অর্থের ৩১টি বিলের বিপরীতে ২৪ জুন ২০২১ তারিখ সাড়ে ছয়লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন সাবেক এই কর্মকর্তা শিরিন শর্মিন লুবনা। একই অর্থবছরের স্টেশনারি সামগ্রীর মালামাল ক্রয়াদেশ ব্যতীত ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে এই খাত থেকেও টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য শিরীন শারমিন লুবনার মুঠোফোনে (১৯৩৩৪৯৬৫৬৬)বারবার ফোন দিও তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্বামী ডাক্তার কাফী জানান, তিনি এখন ব্যস্ত আছেন পরে কথা হবে।

কালীগঞ্জ থানার এসআই জাকারিয়া মাসুদ জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬ নভেম্বর একদল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও উপজেলার পড়শিপাড়া গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে শরীফ মিয়া কে ৭৭ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। সে দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এভাবে প্রতারনা করে বিভিন্ন মানুষের নিকট হতে হাতিয়ে নিয়ে আসছিল মোটা অংকের টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here