হুমায়ুন কবির সোহাগ

কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

আজ বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় সময় যখন বেলা বারোটা তখন কালীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহি:বিভাগ ভবনের দোতালায় ৩৩ নং রুমের সামনে কয়েকজন রোগীর সাথে ডাক্তারি পরীক্ষার কাগজপত্র হাতে নিয়ে বসে ছিলেন সখিনা খাতুন (৪৪)নামের একজন রোগী ।তিনি সকাল ১০ টা থেকে ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থেকেও শেষ পর্যন্ত মেলেনি ডাক্তারের দেখা। তাই গত সোমবারের মতো আজও হয়তো ডাক্তার দেখানো হবে না তার। পেটে ব্যাথা নিয়েই ফিরতে হবে বাড়িতে। কারণ ডাক্তার এম এ কাফি হাসপাতে আজ আসেননি। তাই তার রোগী দেখার ৩৩ নং রুমটিও ছিল বন্ধ। প্রতি সপ্তাহে সোম এবং বৃহস্পতিবার সংযুক্ত কনসালটেন্ট হিসেবে ডিউটি করার কথা থাকলেও ডাক্তার কাফি তা করেন না।খোজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এখনই নয় কালীগঞ্জ হাসপাতালে থাকাকালীন সময়েও তিনি নিয়মিত ডিউটি করেন নি। মাঝেমধ্যে আসলেও রোগী দেখেন না ঠিকমত।
এব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন জানান,কালীগঞ্জ হাসপাতালে অ্যাটাচমেন্টএ দুইজন ডাক্তার রয়েছেন। একজন ডেন্টাল সার্জন ডা:মেহেদী হাসান অপরজন কনসালটেন্ট ডাক্তার এম এ কাফি। দুইজনের মধ্যে ডা:এম এ কাফি নিয়মিতভাবে ডিউটি করেন না। আজ ডাঃ কাফি উপস্থিত আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনিও তা বলতে পারেন নি।পরবর্তীতে মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন ডাঃ কাফি ছুটিতে আছেন। কিন্তু তার ছুটির কোনো দরখস্ত কালীগঞ্জ হাসপাতালে নাই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান,ডাঃ কাফির স্ত্রী এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা থাকার সময় থেকে তিনি বেপরোয়াভাবে অফিস করতেন। কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। হাসপাতালে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ডাঃ কাফির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।কিন্তু কেউ মুখ খুলতে পারেননি কারণ তার স্ত্রী ডাঃ শিরিন শারমিন লুবনা কালীগঞ্জের সাবেক থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে এই হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রী বিদায় নিলেও তার স্বামীর সেই দাম্ভিক স্বেচ্ছাচারী ভাব এখনো যায়নি। ডাঃ কাফির কালীগঞ্জ হাসপাতালে দুই দিন ডিউটি করার কথা থাকলেও তা করেন না।কিন্তু ঠিকই কালীগঞ্জের ক্লিনিকগুলোতে রোগী দেখছেন ও সার্জারি করছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ডাঃ কাফির নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান,” হ্যা আমি ডিউটি ঠিকমতো করি না। লিখবেন? লেখেন, লিখে আমার ** ছিড়ে নিয়েন। আপনি অনেক দূর বেড়ে গেছেন। আপনাকে আমি ছাড়বো না, দেখে নিব।”এছাড়াও অকথ্য ভাষায় এই প্রতিবেদককে গালিগালাজ করেন ডিউটি ফাকি দেওয়া ডাঃ এম এ কাফি।সিভিল সার্জন সেলিনা খাতুন জানান, ডাঃ কাফি আমাকে কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছেন তিনি ছুটিতে আছেন।উনি যেহেতু ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সেহেতু উনার ছুটির দরখস্ত সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এর নিকট থাকার কথা । আর সপ্তাহে ২ দিন কালীগঞ্জ হাসপাতে ডিউটি করার কথা থাকলেও উনি সেখানে নির্দিষ্ট দিনে যান না কিংবা ঠিকঠাক রোগী দেখেন না, এব্যাপারে আমার জানা ছিল না।তবে ডিউটি ফাকি দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।আমি তার ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট থেকে জেনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পেলে যথাযথ ব্যাবস্থা নিব।পেশাগত দায়িত্ব পালনে কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সদস্য জাতীয় দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার কালীগঞ্জ প্রতিনিধি সাংবাদিক হুমায়ুন কবির সোহাগের সাথে বিশ্রী ভাষায় কথা বলা ও হুমকি প্রদান প্রসঙ্গে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন জানান, ডাঃ এম এ কাফি ডিউটি ফাকিবাজ একজন ডাক্তার। তিনি কোনো অবস্থাতেই সাংবাদিকের সাথে বাজে আচরণ ও হুমকি দিতে পারেন না।তার এই ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার ব্যাপারে আমারা সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নিব ঘুব শিঘ্রই।
ডাঃ কাফির মতো ডিউটি ফাকি দেওয়া ডাক্তারের কারণেই ডাক্তার সমাজের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস শ্রদ্ধাবোধ দিন দিন কমে যাচ্ছে।আর উপজেলা পর্যায়ের জনগন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here