নিউজ বাংলা ডেস্ক: প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তুলেছেন জ্যাতির্বিজ্ঞানীরা। ৪০ বিলিয়ন (৪০ হাজার কোটি) কিলোমিটার ব্যাসের এই কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তোলা হয়েছে দূরবর্তী একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) বুধবার (১০ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ছবি প্রকাশ করেছে। বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে স্থাপিত আটটি টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে এই কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তোলা হয়েছে। এটি পৃথিবীর আকৃতির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ গুণ বড়।
কৃষ্ণ গহ্বরটির অবস্থান প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন (১ মিলিয়ন= ১০ লাখ, ১ ট্রিলিয়ন= ১ লাখ কোটি) কিলোমিটার দূরে এম৮৭ নামে একটি ছায়াপথে। এই কৃষ্ণ গহ্বরের ভর সূর্যের চেয়েও ৬৫০ কোটি গুণ বেশি। ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ভারী কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে অন্যতম এটি।
এনএসএফের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে টেলিস্কোপের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইভেন্ট হরিজন টেলিস্কোপ কোলাবোরেশন বা ইএইচটি কৃষ্ণ গহ্বর পর্যবেক্ষণ ও এর ছবি তুলতে কাজ করে। পুরো প্রকল্পে জড়িত ছিলেন ২০০ বিজ্ঞানী-গবেষক। এই কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তুলতে তারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, কৃষ্ণ গহ্বরের অস্তিত্ব আছে বলে বিজ্ঞানীরা যে ধারণা বা দাবি করে আসছিলেন এতোদিন, এই ছবি তার পক্ষে সরাসরি দৃশ্যমান প্রমাণ। ছবিতে যা বোঝা যাচ্ছে, এই কৃষ্ণ গহ্বরের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে একটি আলোক বলয়, যা এক পাশ থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ইএইচটির ডিরেক্টর শেপার্ড ডোয়েলেম্যান বলেন, আসলে আমরা এমন কিছু দেখে ফেলেছি, যা আমাদের কাছে মনে হয়েছিল দেখা যাবে না।’ কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তোলার প্রস্তাবক এবং নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেইনো ফ্যালকে বলেন, ‘আমরা যা দেখলাম (কৃষ্ণ গহ্বর) তা আমাদের গোটা সৌরজগতের চেয়েও বড়।’
আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথম তার সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বা জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির মাধ্যমে কৃষ্ণ গহ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে ধারণা দেন। সেই তত্ত্ব অনুসারে, কৃষ্ণ গহ্বর ব্রহ্মাণ্ডের এমন একটি বিশেষ স্থান, যেখান থেকে কোনো কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। পথ হারায় আলোকতরঙ্গও।
বিজ্ঞানীদের মতে, ব্রহ্মাণ্ডে এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র আছে, যারা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বলয় তৈরি করে যে- এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যে কোনো বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যায়। এর নাম ‘ব্ল্যাক হোল’ দেন পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার। ১৯৯৪ সালে নভোচারীরা প্রমাণ করেন আসলেই কৃষ্ণ গহ্বর আছে।
প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে গবেষণাতেই। তার ভাষ্য ছিল, কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যবর্তী স্থানে সেটির ভর একটিমাত্র জিরো ডাইমেনশনাল পয়েন্টে আটকানো থাকে।
কৃষ্ণ গহ্বরের রহস্যভেদ এখনো কেউ করতে না পারলেও মনে করা হচ্ছে, বহু সাধনায় তোলা এ ছবিই মহাকাশবিজ্ঞানকে আরও অনেক দূর এগিয়ে দিলো।