শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
কোরআন আল্লাহর কালাম। এটি সর্বশেষ আসমানি কিতাব, যা সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর নাজিল হয়েছে। এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোনো কিতাব ও নতুন কোনো নবী বা রাসুল আসবেন না। এটিই কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের জন্য দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ। কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ছাড়া প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। তাই সহিহভাবে কোরআন তিলাওয়াত জানতে হবে। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা জরুরি। কোরআন জীবনপথের দিশা। তাই সঠিকভাবে অর্থ বুঝতে হবে এবং এর সামগ্রিক দর্শন অনুধাবন করতে হবে। কোরআন পরিপূর্ণ জীবন বিধান। সুতরাং পরিপূর্ণরূপে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। ব্যক্তিজীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং সব ক্ষেত্রে কোরআনের কল্যাণ বিধান অনুসরণ করতে হবে। প্রত্যেকে নিজে কোরআন অনুসারে চলার পাশাপাশি কোরআনের শাশ্বত শান্তির বাণীর প্রতি দুনিয়াবাসীকে দাওয়াত বা আহ্বান করতে হবে। কোরআনের কল্যাণবাণী সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং কোরআনের অধ্যয়ন ও অনুশীলন বা চর্চা করতে হবে।
রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমাদান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল–কোরআন, মানুষের জন্য হিদায়াত রূপে এবং পথনির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য নির্ণয়কারী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৫)। কোরআন হলো আল্লাহর কালাম, আল্লাহর খাস সিফাত বা বিশেষ আদি গুণ; এটি সৃষ্ট নয়। লিপি, পাঠ ও ভাব এই তিনের সম্মিলিত নাম কোরআন। কোরআন মাজিদ বুঝে পড়লে অনেক বেশি নেকি বা সওয়াব। না বুঝে পড়লেও সওয়াব রয়েছে। কোরআন তিলাওয়াতে প্রতি হরফে ১০টি করে নেকি হয়, প্রতিটি নেকি আল্লাহ ১০ গুণ করে দেন। রমজানে প্রতিটি আমলের প্রতিদান ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজানে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ সুন্নাত আমল। সাহাবায়ে কিরাম কোরআন বুঝতেন এবং বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন।
কোরআন শরিফ, কাবা শরিফ এবং পিতা–মাতার চেহারা মোবারক এই তিন জিনিস শুধু দেখলেই সওয়াব হয়। কোরআন শরিফ তিলাওয়াতে তিনটি ফরজ রয়েছে: হরফ বা বর্ণসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করা, হরকত বা স্বরচিহ্ন তাড়াতাড়ি পড়া, মাদ বা দীর্ঘ-স্বর হলে টেনে পড়া। কোরআন শরিফ পড়তে তিনটি কাজ করতে হয়: পবিত্র হওয়া (ফরজ), আউযুবিল্লাহ পড়া (ওয়াজিব), বিসমিল্লাহ পড়া (সুন্নাত)। তিনটি কাজে পবিত্রতা প্রয়োজন বা ফরজ হয়: নামাজ পড়া, কাবা শরিফ তাওয়াফ করা এবং কোরআন শরিফ স্পর্শ করা।
কোরআন শেখা ফরজ, শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা জরুরি। যাঁরা পড়তে জানেন না, তাঁদের শিখতে হবে। যাঁরা শিখে ভুলে গেছেন,
তাঁদের পুনরায় পড়তে হবে। যাঁরা ভুল পড়েন, তাঁদের সহিহ শুদ্ধ করতে হবে। তিন প্রকার লোকের তিলাওয়াতের ভুল মাফ হবে: যাঁরা সহিহ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, যাঁরা সহিহ করার চেষ্টায় রত আছেন, যাঁদের সহিহ শিক্ষার সুযোগ নেই বা সহিহ ও ভুলের জ্ঞান নেই।
প্রিয় নবী (সা.)–কে কোরআন অধ্যয়ন, অনুশীলন ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েই পাঠানো হয়েছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি তাদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে এমন রাসুল পাঠান, যিনি আপনার আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, কিতাব ও হিকমাত শেখাবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি স্নেহশীল ও মহাকৌশলী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৯)।
®রমজানের ও শবে কদরের ফজিলত কোরআন কারিমের কারণে। মক্কা–মদিনার ফজিলতও কোরআন নাজিলের কারণেই। কোরআনের পরশেই গিলাফ ও রেহালের সম্মান। যে মানুষ যত কোরআনের ধারক–বাহক হবে, তার সম্মানও তত বেশি হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ (মুসলিম)। যারা কোরআন চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে হাশরের দিনে বিচারের সময় আল্লাহর আদালতে প্রিয় নবীজি (সা.) অভিযোগ করবেন, ‘রাসুল (সা.) বলবেন, হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৩০)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক