নিউজবাংলা ডেস্ক: মেরামতের পাঁচদিন আগেই কেরানীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে ভিড়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারি লঞ্চ এমভি পারাবত-১০। ১৬ বছরের পুরনো এ লঞ্চের ফেন্টারে (পেছনের অংশ) ফাটল ধরেছে, রঙ চটে হয়েছে বিবর্ণ। ত্রুটি রয়েছে প্রপেলারেও (পাখা)। যতটুকু সম্ভব মেরামত করে ২৫ রমজানের আগেই ডকইয়ার্ড ছাড়বে লঞ্চটি।
তৈলঘাট দিয়ে ডকইয়ার্ডে ঢুকতেই চোখে পড়বে এমভি জামাল-৩। সপ্তাহখানেক ধরে চলছে এর মেরামত। পাটাতন, ডেক, কেবিন, ছাদ—কোনোটাই ঠিক নেই। সবকিছু নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু হাতে সময় আছে মাত্র এক সপ্তাহ। এরপর যাত্রী নিয়ে ঢাকা-চাঁদপুর-শৌলা-মুলাদী রুটে ঈদের ট্রিপ শুরু করবে লঞ্চটি।
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ডকইয়ার্ডগুলোর শ্রমিকদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। ৩৩টি ডকইয়ার্ডের প্রতিটিতেই মেরামতের কাজ চলছে। মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে একাধিক লঞ্চ। ঈদের আগেই প্রস্তুত হবে সবক’টি। সীমিত সময়ের মধ্যে লঞ্চ মেরামতের কাজ শেষ করা নিয়ে খোদ শ্রমিকরাই সংশয় প্রকাশ করছেন। ইয়ার্ডের মালিকরাও বলছেন, এত অল্প সময়ে লঞ্চের সব ত্রুটি সারানো কঠিন। তার পরও লঞ্চ মালিকদের চাপে কোনো রকমে ঘষেমেজে ঈদের জন্য প্রস্তুত করে দিচ্ছেন তারা।
স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৪৭টি রুটে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলে। ঈদের সময় এ সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ২১০টির বেশি ছোট-বড় লঞ্চ। এসব লঞ্চের বেশির ভাগই বর্তমানে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে অবস্থান করছে।
সোমবার সরেজমিন কেরানীগঞ্জের লাকি ডকইয়ার্ড, তারিক ডকইয়ার্ড, ফাত্তাহ ডকইয়ার্ড, চেয়ারম্যান সাহেবের (ইকবাল) ডকইয়ার্ড, অগ্রদূত ডকইয়ার্ড, পারজোয়ার ডকইয়ার্ড, কুমিল্লা ডকইয়ার্ড ও পারাবত ডকইয়ার্ড ঘুরে প্রতিটিতেই পুরনো লঞ্চ ঈদের জন্য মেরামত করতে দেখা গেছে। তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, লঞ্চ মেরামতের কাজটি নিয়মিতই করতে হয়। ঈদের সময় এটি কিছুটা বেড়ে যায়। পারাবত ইয়ার্ডে কথা হয় এমভি পারাবত লঞ্চের মালিক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে।
বিভিন্ন রুটে তার ছয়টি বড় লঞ্চ চলাচল করছে। এবারের ঈদেও এ ছয়টি লঞ্চ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে মেরামতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সদরঘাটে প্রয়োজনের তুলনায় পন্টুনের সংখ্যা কম। আর নদীও এত ছোট হয়ে এসেছে যে একসঙ্গে দুটির বেশি লঞ্চ চললে একটির সঙ্গে আরেকটির ধাক্কা লাগে। এ ধাক্কাধাক্কির কারণে লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে লঞ্চের মূল কাঠামো কিন্তু ঠিকই থাকে। রঙ চটে যাওয়া ও ছোটখাটো ত্রুটি সারানোর কাজ তাই সারা বছরই চালাতে হয়। ঈদের সময় এ কাজ আরো বেড়ে যায়।
আনফিট লঞ্চ চলাচল সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো লঞ্চই আনফিট না। স্বাভাবিকভাবে একটি লঞ্চের আয়ু থাকে ৩০ বছর। এরপর সেটি ইয়ার্ডে মেরামতের পর আরো পাঁচ বছর চালানো যায়। সদরঘাট দিয়ে চলাচল করা বেশির ভাগ লঞ্চের বয়সই ২০ বছরের কম এবং সবক’টিকে যাত্রী চলাচলের জন্য ফিট বলে দাবি করেন তিনি।তবে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে চলাচল করা অর্ধেক নৌযানেরই ফিটনেস সনদ নেই। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নৌযান আছে ১২ হাজার ৪০০। এর মধ্যে ফিটনেস সনদ আছে মাত্র ৬ হাজার ১৫৯টির। ফিটনেস সনদ না থাকা নৌযানের একটা বড় অংশ এবার ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে।
ফিটনেসবিহীন নৌযান ঈদযাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সম্পর্কে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ঈদের সময় মানুষের চাপে লঞ্চে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। এমন অবস্থায় ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। তাই ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল প্রতিরোধে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ঈদে যেন কোনো আনফিট নৌযান যাত্রী পরিবহন করতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তত্পর রয়েছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন সংস্থাটির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ঈদে মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সেজন্য আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। ফিটনেসবিহীন নৌযানগুলোর প্রতি আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করব।