নিউজ বাংলা ডেস্ক:  চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে, দেশটির ঋণ নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রিচার্ড এল বেনকিন নামের একজন মার্কিন লেখক-গবেষক। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত বেনকিন চীনা ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের চেষ্টাকে বর্ণনা করেছেন ‘বড় ধরনের ভুল’ হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন ‘দক্ষ ও সুচারু’ রাষ্ট্রনায়ক অভিহিত করে তিনি বলেন, “গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশের বিনিয়োগে যুক্ত চীনকে তাদের নিজেদের সাজানো খেলায় কেউ হারাতে পারবে বলে চিন্তা করা বোকামি।” শুক্রবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দি এশিয়ান এইজ আয়োজিত ‘ডেব্ট ট্র্যাপ ডিপ্লোমেসি: আ রিজিওনাল থ্রেট’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন বেনকিন।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রাক্কলনের কথা তুলে ধরে  তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বড় আকার ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী এমনকি বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ অচিরেই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। “ক্রেডিট বা ঋণ সম্পর্কে বাজারে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে অধিক পরিমাণ ঋণ নেওয়া কখনোই ভালো কিছু নয়।”

চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ যুক্ত হওয়া ২৩টি দেশ নিয়ে আলোচনায় রিচার্ড বেনকিন বলেন, “এসব দেশ ঠিকই উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে ঋণ সঙ্কটের ঝুঁকিতে পড়েছে।” উদাহরণ হিসাবে কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, জর্ডান, লেবানন ও ইউক্রেনের কথা বলেন তিনি।

চীনকে একটি ‘গণতন্ত্রহীন ও মানবাধিকারহীন’ রাষ্ট্র আখ্যায়িত করে বেনকিন বলেন, “এই রাষ্ট্রের সঙ্গে ঋণ নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশেও এ ধরনের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে।”

চীনের সমালোচনা করতে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করা এবং সেখানে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের নির্যাতনের কথা বলেন তিনি। পরে সেমিনারের মুক্ত আলোচনায় তার অধিকাংশ যুক্তির সঙ্গেই দ্বিমত পোষণ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে চীনা ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু এই ঋণ নিয়ে যদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করা যায় তাহলে তা কখনোই খারাপ কিছু নয়। ঋণ যখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত হয় তখন এর একটা খারাপ দিক থাকে।” চীন থেকে ঋণ নিয়ে অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতাই কাম্য। “পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট বিশ্ব ব্যাংক ও এ ধরনের সংস্থাগুলো নিজেরা ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখে চীনের ঋণের সমালোচনা করে আবার নিজেরাও চীনের সঙ্গে লেনদেন করে। এটাকেই বলে ওয়েস্টার্ন হিপোক্রেসি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here