নিউজবাংলা ডেস্ক
সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেনাসদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সামরিক প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ ভারত সীমান্তে চীনের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির মধ্যেই মঙ্গলবার তিনি এমন মন্তব্য করলেন।
কোন দেশের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা করছেন; তা অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি চীনা প্রেসিডেন্ট। তবে তার যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশের দিনেই নিজ দেশের তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে গত ২২ মে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই লাদাখ সফরে যান ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে।

সম্প্রতি ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রবল উত্তেজনা বিরাজ করছে। চীন সেখানে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভারতের পানিসীমা ও আকাশসীমা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠছে বেইজিং-এর বিরুদ্ধে। লাদাখ ও উত্তর সিকিমে দুই দেশই সেনা ও সমরাস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়েছে।

লাদাখ সীমান্তের কাছে চীনের সামরিক ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘাঁটিতে ব্যাপকভাবে নির্মাণকাজ চলছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, চারটি যুদ্ধবিমান সেখানে রয়েছে। চীন সেখানে যুদ্ধবিমান ওঠানামার জন্য আরও একটি টারম্যাক তৈরি করেছে। এপ্রিল ও মে মাসের দুইটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন সেখানে নির্মাণকাজ কী পরিমাণে বাড়িয়েছে। আরেকটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন জে১১/জে১৬ যুদ্ধবিমান সেখানে রেখেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের সুখোই ৩০ বা রাফালের সমগোত্রীয়।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার সমীর জোশি এনডিটিভি-কে বলেছেন, চীনের যুদ্ধবিমানগুলো ওই উচ্চতায় এক ঘণ্টার বেশি উড়তে পারবে না। সেই তুলনায় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো সমতলের এয়ারবেস থেকে তিন থেকে চার ঘণ্টা উড়তে পারবে। অবশ্য তার জন্য এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ব্যবহার করতে হবে।

চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের আগে তিন বাহিনীর প্রধান প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সীমান্ত পরিস্থিতি ও ভারতের তরফে প্রস্তুতির কথা জানান।

দিল্লির চীনা দূতাবাসও একটি নোটিশ দিয়ে বলেছে, ভারত থেকে যেসব চীনারা দেশে ফিরতে চান, তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য একে দিল্লিকে চাপে রাখার চীনা কৌশল হিসেবেই দেখছে।

চীনের সমস্যা শুধু ভারত নয়। তাদের আরও বড় সমস্যা যুক্তরাষ্ট্র ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। করোনার জন্য যাবতীয় দায় ট্রাম্প বেইজিং-এর ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হংকং-এ চীন যেভাবে গণতন্ত্রপন্থীদের মোকাবিলা করছে তা নিয়েও সোচ্চার হচ্ছে ওয়াশিংটন।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দুই দিন আগে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সমানে চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে ও গুজব রটাচ্ছে। ফের ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুদ্ধকালীন সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে দিতে হবে। সামরিক মিশন সুসম্পন্ন করার জন্য সেনাদের দক্ষতা প্রচুর বাড়িয়ে নিতে হবে। তার এমন বক্তব্য স্পষ্টতই ভারতের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ। প্রায় তিন হাজার ৪৮৮ কিলোমিটারজুড়ে চীন-ভারত সীমান্ত অবস্থিত। দিল্লির দাবি, ২০১৫ সাল থেকে চীনা সেনারা দফায় দফায় ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। তবে এবার চীনা প্রেসিডেন্ট যেভাবে সরাসরি যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন তাতে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায় তা সময়ই বলে দেবে। সূত্র: ডিডব্লিউ, হিন্দুস্তান টাইমস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here