সুজন বিশ্বাস: আবু ইসহাকের ১২টি ছোটগল্প পড়ে শেষ করলাম। গল্পগুলোর বিষয়বস্তুতে লেখক ক্ষুদ্র পরিসরে সমাজের নানা বিষয়াদি তুলে ধরেছেন। ফলে সার্থকভাবেই সেগুলো সমাজের দর্পণ হয়ে উঠেছে। এতে যেমন রয়েছে আমাদের নাগরিক জীবনের নানা অসংগতির চিত্র, তেমনি রয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার, গ্রামীণ দরিদ্র শ্রেণির মানুষের অসহায়ত্ব ও প্রতিবাদের চিত্র।
‘দাদির নদীদর্শন’, ‘বোম্বাই হাজি’, ‘শয়তানের ঝাড়ু’ ইত্যাদি গল্পে লেখক সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন ধর্মীয় কুসংস্কারের জালে বন্দি মানুষের জীবনচিত্র। তবে ‘শয়তানের ঝাড়ু’ গল্পে লেখক অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম কটাক্ষ নিক্ষেপ করেছেন। এছাড়া ‘উত্তরণ’ গল্পে তুলে ধরেছেন এক গ্রামীণ প্রতারক দুধবিক্রেতার মানবিক বোধে জাগ্রত হওয়ার গল্প।
‘প্রতিবিম্ব’, ‘বর্ণচোর’, ‘বনমানুষ’ ইত্যাদি গল্পে উঠে এসেছে নাগরিক জীবনের নানা অসংগতি। এই গল্পগুলোতে নাগরিক জীবনের অসংগতির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ ধ্বনিত না হলেও ‘ঘুপচি গলির সুখ’ গল্পে হানিফ চরিত্রের মধ্যে দেখা যায় নীরব প্রতিবাদ। ‘জোঁক’ ও ‘আবর্ত’ গল্পদুটিতে লেখক তীব্রভাবে গ্রামীণ জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন ‘জোঁক’ গল্পের ওসমান চরিত্রকে।
এছাড়াও ‘হারেম’ গল্পে লেখক দেখিয়েছেন সুখ-ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা প্রতাপশালী জমিদারের মাথা হেঁট হওয়ার চিত্র। আবার ‘মহাপতঙ্গ’ নামক গল্পটিতে উঠে এসেছে পাখির দৃষ্টিতে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসার পাশাপাশি তাদের হিংস্রতার কথা। মোটকথা আবু ইসহাক শক্তিমান লেখক হিসেবে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন গল্পগুলোতে। সাহিত্যজীবনে মাত্র ২১টি ছোটগল্প লিখলেও তা দিয়ে তিনি চির অমলিন হয়ে থাকবেন বাংলার সাহিত্যাকাশে।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here