নিউজ বাংলা২৪ ডেস্ক: বাংলার সাহিত্যাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই। ১৪ মে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকে মুহ্যমান বাঙালি জাতি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণ শোক প্রকাশ করছেন তাঁর মৃত্যুতে। ৮৩ বছর বয়সে চিরবিদায় নেওয়ার পূর্বে তিনি বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন অনেক। তার স্বীকৃতিস্বরূপ ভূষিত হয়েছেন বহু পদক ও সম্মাননায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেওয়া হয়েছিল জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা।
শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু করেন কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে। পরবর্তীতে প্রিয়নাথ হাইস্কুল (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যাল) থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল’ বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। পরবর্তীতে তিনি এই বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়া তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যুদ্ধকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে তিনি বহু গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘স্বরূপের সন্ধানে’, ‘আঠারো শতকের বাংলা চিঠি’, ‘পুরোনো বাংলা গদ্য’, ‘আমার একাত্তর’, ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’, ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’, ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ পদক’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী পদক’, ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি. লিট ডিগ্রিসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।