প্রেসবিজ্ঞপ্তি : জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম কমানো ও গণপরিবহনের ভাড়া পূননির্ধারনের দাবিতে মিডিয়া ব্রিফিং ও মানববন্ধন করেছে এবি পার্টি।
শনিবার বিকালে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি ও গনপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে এক মিডিয়া ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় ব্রিফিং করেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। লিখিত ব্রিফিং এ তাজুল ইসলাম বলেন, গোটা দেশের অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতিতে তেলের দাম বৃদ্ধি একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত। আমাদের কৃষি, পন্য পরিবহন থেকে শুরু করে জনগণের জীবন যাত্রার মুল চালিকাশক্তি ডিজেল। ডিজেলের মুল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে যাত্রী ভাড়া, পণ্য পরিবহন সবকিছুতেই খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। ইতোমধ্যেই দ্রব্য মুল্য জনসাধারণের নাগালের বাইরে। তিনি অবিলম্বে জ্বালানি তেল, যাত্রী ভাড়া, দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি রোধে কার্যকর ভুমিকা রাখার দাবী জানান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে চাল, ডাল ভোজ্য তেল, ডিম, মুরগীর মাংস, সবজীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে যখন অতিষ্ট হয়ে পড়ছে, সেই সময়ে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এর সাথে ৪ নভেম্বর বাড়ানো হয় ফার্নেস ওয়েলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা, অন্যদিকে বেসরকারী খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম ( এলপিজি) গ্যাসের দাম ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫০ টাকা। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের অদুরদর্শী চিন্তার ফসল বলে আমরা মনে করি। জনাব তাজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার জরিপে জানা যায় দেশে করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষ। সব মিলিয়ে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ৭ কোটি ছাড়িয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ৪৩ ভাগ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বলা হচ্ছে। এখন এই মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে- বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এবি পার্টি প্রশ্ন রাখতে চায় বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন আমাদের দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি কেন? উল্টো বিশ্ববাজারের রেকর্ড কম দামের বিপরীতে তেলের দাম ততটা না কমিয়ে সবশেষ পাঁচ মাস বাদে গত সাত বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। ১২ বছরে সরকার পানির দাম ১৪, বিদ্যুৎ মূল্য ১২ এবং গ্যাসের দাম ৯ বার বাড়িয়েছে। এখন বিপিসির লোকসান দেখিয়ে ভোটবিহীন সরকার প্রাথমিক জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এই মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার মূলতঃ বিপিসিকে লাভবান করতে চায় এই অভিযোগ তুলে অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, তারা একদিকে বিপিসিকে লাভের রাস্তা করে দিচ্ছে, অপরদিকে শুল্ক ও ভ্যাটের মাধ্যমে নিজেদের লভ্যাংশও তুলে নিচ্ছে আর এর সরাসরি ভিক্টিম হচ্ছে এদেশের জনগণ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের আগে একইভাবে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েও দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেশি দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম স্বাভাবিক রাখার জন্য আবদারি শুল্ক লিটার প্রতি যথাক্রমে ৫ ও ১০ টাকা কমানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি সত্তেও ভারতে তেলের দাম সরকারীভাবে তেলের দাম কমানোয় নাগরিকদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম থেকে জানা যায়। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধির একদিন পরেই সড়ক ও নৌপথের মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন অনির্ধারিতভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয় যার ফলে সাধারন জনগন, অফিসগামীসহ লোকজন, শিক্ষার্থী , চাকুরীর পরিক্ষার্থী সহ বিদেশগামী যাত্রী এমনকি অসুস্থ রোগীগন ও বিরাট ভোগান্তির শিকার হন। পরবর্তীতে সরকারের সাথে বৈঠকে ভাড়া নির্ধারনের হারটি নির্ধারণ করা হয়েছে পরিবহন মালিকদের অনুকুলে। পরে মাঠপর্যায়ে নিজেদের সুবিধামতো ভাড়া নির্ধারণ করেছেন পরিবহন মালিকরা। বাজার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বী দাম, গাড়িতে আকাশচুম্বী ভাড়া; কিন্তু এই জনগণের উপার্জন আকাশচুম্বী দূরে থাকুক; সচিবালয়ের ছাদও ছুঁতে পারেনি। অথচ সরকারি প্রেসরিলিজের মতো করে নিউজ বিলি করা হচ্ছে- বাংলাদেশের মানুষের আয় ২৫০০ ডলার প্রায়। আরেক প্রতিমন্ত্রী বলে বসেছেন – ” বাংলাদেশের মানুষ টেরই পাচ্ছেনা কীভাবে তারা ধনী হচ্ছে।” এসব স্রেফ এদেশের মানুষের সাথে উপহাস। ২৫০০ ডলার উপার্জন করা মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় ঘুমায়, বাসের ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হয়, এক সপ্তাহের বাজার করতে গিয়ে এক মাসের বেতন খরচ করে আসতে হয়। তিনি এবি পার্টির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের দাম স্থিতিশীল জ্বালানী তেল, গ্যাসের সকল শুল্ক, কর পরিহার করতে হবে; বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ যেসব ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে সেক্ষেত্রে সরকারী ভর্তুকী বাড়াতে হবে। সড়ক পরিবহনের বিভিন্ন পর্যায়ের চাঁদাবাজী রোধে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। অবিলম্বে চাল, ডাল, চিনি ,ভোজ্য তেল, মুরগী, ডিম, সবজী সহ সকল কৃষি পন্যের দাম সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর রাখতে হবে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্যকর করে স্বল্প মূল্যে সাধারন মানুষের মধ্যে ভোগ্যপন্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মানুষের জীবন যাত্রা আজ দূর্বিষহ। এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের কারনে মানুষের জীবন জীবিকা হয়ে উঠেছে অসহনীয়। এই রকম পরিস্থিতিতে মরার উপর খাড়ার ঘা’য়ের মতো সরকার অমানবিক ভাবে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। যা আমাদের কৃষি, কৃষি পণ্য পরিবহনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তিনি অবিলম্বে ডিজেলের মূল্য সমন্বয় করে যাত্রী ভাড়া কমানো সহ দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি রোধে কার্যকর ভুমিকা রাখার দাবি জানান। মিডিয়া ব্রিফিং এ আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএম না