নিউজ বাংলা ডেস্কঃ
রাশিয়া বলেছে, তালেবানরা কমপক্ষে ১০০ সামরিক হেলিকপ্টার তাদের দখলে নিয়েছে। এসব হেলিকপ্টার রাশিয়ায় তৈরি। তবে এগুলোর কার্যক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রপ্তানি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের প্রধান আলেক্সান্দার মিখিভ বলেছেন, তালেবানদের হাতে এসব হেলিকপ্টার থাকলেও তারা এর সুবিধা তেমন পাবে না। কারণ, এর রক্ষণাবেক্ষণে যেসব ক্রু প্রয়োজন, তা তালেবানদের কাছে নেই বললেই চলে। এছাড়া তাদের হাতে এর অতিরিক্ত যন্ত্রাংশও নেই। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক অভিযানে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে তালেবানরা।
তারা সেনাদের অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র নিজেদের হাতে নিয়েছে। একই সঙ্গে সেনাদের সব যানবাহনও তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারা এমআই-১৭ হিপ হেলিকপ্টারের কমপক্ষে ১০০টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এসব হেলিকপ্টার রাশিয়ায় তৈরি। মূলত পণ্য পরিবহনের জন্য এসব হেলিকপ্টার আফগান সেনাবাহিনীর জন্য কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, তুলনামূলকভাবে এর দাম কম এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ইউএইচ-৬০ ব্লাক হকসের চেয়ে এটা উড়ানোও সহজ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক রোসোবোরোনএকপোর্টার। এর প্রধান আলেক্সান্দার মিখিভ বলেন, বিপুল সংখ্যক হেলিকপ্টার তারা দখলে নিয়েছে। অবশ্যই এর মধ্যে অনেকটাকে মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজন অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ। এর মধ্যে অনেক হেলিকপ্টার এখন মাটি স্পর্শ করে আছে। এখন পর্যন্ত রিপোর্টে যে সংখ্যা বলা হয়েছে, রাশিয়ায় তৈরি হেলিকপ্টার আফগানিস্তানে তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করেন মিখিভ। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন (সিগার) এক রিপোর্টে বলেছে, আফগানিস্তানে সেনাবাহিনীর কাছে ছিল এমআই-১৭ ব্রান্ডের ৫৬টি হেলিকপ্টার। এর মধ্যে ৩২ টি কাজে ব্যবহার অনুপযুক্ত। এমআই-১৭ হলো রাশিয়ার এমআই-৮ সংস্করণের হেলিকপ্টারের রপ্তানিমুখি হেলিকপ্টার। এসব হেলিকপ্টার তৈরি করা হয় কাজান এবং উলান-উদে’তে স্থাপিত দুটি কারখানায়।
এসব হেলিকপ্টারের মধ্যে কতগুলো এখন উড়ার মতো অবস্থায় আছে তা স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। এ মাসের শুরুর দিকে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার তালেবান যোদ্ধাদের উড়ানোর ভিডিও দেখা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি যে, তারা দখল অভিযানে বা সম্মুখ সমরে এসব হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে। সম্প্রতি ব্লাক হকস হেলিকপ্টার আফগানিস্তানকে দিয়ে দেয়ার নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অথবা রাশিয়ার তৈরি হেলিকপ্টার চালানোর মতো প্রশিক্ষিত ক্রু নেই তালেবানদের কাছে। সিগারের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ব্লাক হকস ফ্লিট মাত্র ৩৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কারণ, এর রক্ষণাবেক্ষণের কন্ট্রাক্টরদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানের বিমানবাহিনীর শক্ত অবলম্বন। এটা দিয়ে তারা নিয়মিত সেনা, সামরিক গোলাবারুদ, হতাহতদের উদ্ধার কাজে ব্যবহার করতো। এই হেলিকপ্টার ২০০৫ সালে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা রাশিয়ার কাছ থেকে এর কমপক্ষে ৫০টি হেলিকপ্টার কেনে। ২০১৩ সালে আরো ৩০টি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব কংগ্রেসে বিরোধিতার মুখে পড়ে। পেন্টাগন কিন্তু এই হেলিকপ্টার কেনার জন্য চাপ দেয়। তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল ২০১৩ সালের এপ্রিলে কংগ্রেসে বলেন, তারা এসব হেলিকপ্টার বছরের পর বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে। এসব হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণ সহজ, নির্ভেজাল। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এসব হেলিকপ্টার কিনতে পারি।