সব জল্পনা-কল্পনা শেষে ১৬ দিন পর দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

এরশাদের দেশে ফেরার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৬ ফ্লাইটে করে আজ রাত ৯টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছেন এরশাদ।

বিমানবন্দরে এরশাদকে স্বাগত জানান তার বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁঞা, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ তালহা, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, নুরুল ইসলাম নুরু, যুগ্ম মহাসচিব শফিকুল ইসলাম শফিক, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. আবুল খায়ের, মো. মিল্টন মোল্লা, মাখন সরকার, যুগ্ম দফতর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. আলমগীর কবীর, মিজানুর রহমান দুলাল, মো. মাহাবুবুর রহমান লিপ্টন, এম রফিকুল আলম সেলিম, ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি শামীম আহমেদ রিজভী, ছাত্রসমাজের সভাপতি মোড়ল জিয়া।

গত ১০ ডিসেম্বর ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া তার দেশে ফেরা নিয়ে শুরু হয় নাটকীয়তা।

গত রোববার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তার উপ-প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এবং জাপা’র যুগ্ম দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান জানিয়েছিলেন, সোমবার রাতে দেশে ফিরছেন এরশাদ।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে সন্ধ্যায় দেয়া এরশাদের ফেরার খবর রাতেই পাল্টে যায় দেলোয়ার জালালীর আরেক বিবৃতিতে।

সেই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ শেষে সোমবার দেশে ফেরার কথা ছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের। কিন্তু মেডিকেল চেকআপ শেষ না হওয়ায় সোমবার দেশে ফিরছেন না তিনি।’

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ধরনের খবর দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে।’

ভোটের আগে নানা গুঞ্জনের মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ এরশাদের সঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও সিঙ্গাপুরে যান।

সেদিন জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার হাতে দিয়ে যান এরশাদ। কিন্তু নিজের অবর্তমানে ‘চেয়ারম্যানের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব’ পালনের দায়িত্ব দিয়ে যান সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে।

জাতীয় পার্টির নেতারা বলে আসছেন, ‘রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৮৮ বছর বয়সী এরশাদ। দেশে থাকতে তাকে নিয়মিত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যাওয়া-আসা করতে হচ্ছিল।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তাতে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছিলেন, এরশাদের এবারের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক’ নয়, তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ।

এই অসুস্থতা নিয়ে এরশাদের ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছিলেন, এই বয়সে যতটা অসুস্থ হয় মানুষ, তার ভাই তেমনই অসুস্থ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here