কামাল ইয়াসীন,রাজশাহী
ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রায় ৪০ বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কোহিনুরের ছাগল প্রজননের কাজটুকুও বন্ধ করে দিয়েছে সমাজপতিরা।
জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের সামশুল হকের স্ত্রী হতদরিদ্র কোহিনুর ছাগল প্রজননের মাধ্যমে পরিবার পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ওই হতদরিদ্র পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষে পিকেএসএফ এর অর্থায়নে স্থানীয় এনজিও শতফুল বাংলাদেশ পাঁঠা পালন ও প্রজননের লক্ষ্যে পাঁঠা পালনের মাচাসহ বিনামূলে দু’টি পাঁঠা প্রদান করে।
আক্রোশের শিকার কোহিনুর এই প্রতিবেদককে জানান, তার শশুর থেকেই তাদের পরিবারে ছাগল প্রজননের ব্যবসা চলে আসছে। তিনি বলেন, ছাগল প্রজননের জন্য তার বাড়িতে দুটি পাঁঠা ছিল। এনজিও শতফুল বাংলাদেশ বিনামূল্যে আরো দুটি পাঁঠা দিলে ৪টি পাঁঠা দিয়ে খরচ বাদ দিলে গড়ে প্রতিদিন ৩০০/- টাকা আয় হতো। এই টাকা দিয়ে পরিবারের ৬ জন সদস্যের কেনোমতে জীবিকা নির্বাহ হতো। এরই মধ্যে হঠাৎ করে গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার শিবপুর খুলুপাড়া মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলী, গ্রাম প্রধান সোহরাব, একই গ্রামের খলিলের ছেলে মুরসালিন প্রমুখদের নেতৃত্বে একটি গ্রæপ আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে তার বাড়িতে ছাগল প্রজননের কোন কাজ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং সেই সাথে ৭ দিনের মধ্যে পাঁঠা বিক্রির জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু ১ সপ্তাহের মধ্যেই বৃদ্ধা কোহিনুর পাঁঠা বিক্রি করতে না পারায় গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আবারো মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলী, গ্রাম প্রধান সোহরাব হোসেন, মুরসালিন রা কোহিনুরের বাড়িতে এসে পাঁঠা বিক্রি না করার কারণ জানতে চান। এতে করে কোহিনুরের ছোট ছেলে মাহাবুরের সাথে আবেদ আলী গং বির্তকে জড়িয়ে পড়লে শিবপুর গ্রামের খলিলের ছেলে মুরসালিন, মাহাবুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধর করে। মসজিদের কিছু উগ্র মুসল্লি শতফুল বাংলাদেশের সাইনবোর্ড হেঁচকা টানে খুলে ফেলে সেই সাথে পাঁঠা রাখার জায়গাটিতে ভাংচুর চালায় এবং তড়িঘড়ি করে স্বল্প মূল্যে ৪টি পাঁঠা বিক্রি করতে বাধ্য করে।
মারধরের শিকার মাহাবুর জানায় মোহনপুর থানায় অভিযোগ করলে তার চিকিৎসা বাবদ ২৫০০ টাকা দেয়া হয়। এ বিষয়ে শিবপুর খুলু পাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মসজিদের মুসল্লীর স্বার্থে এবং গ্রাম পবিত্র রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও বৃদ্ধা কোহিনুরের বাড়ি থেকে খুলুপাড়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার। ৪০ বছর ধরে ওখানে ছাগল প্রজননের কাজ চলে আসছে। এতোদিন প্রতিবাদ করেননি কেন? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে মুয়াজ্জিন আবেদ আলী নীরব ভূমিকা পালন করেন। এ যেন শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’ গল্পের মৃতুঞ্জয়কে তাড়িয়ে গ্রাম পবিত্র করার অপতৎপরতা। ওদিকে ছাগল প্রজননের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধা কোহিনুরের পরিবার অর্ধাহার-অনাহারে জীবন যাপন করছেন।
গ্রাম প্রধান সোহরাব হোসেনের যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) মোস্তাক আহম্মেদ জানান, তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সানওয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না, ঘটনা খতিয়ে দেখবেন।