নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোর সদর আসনের এমপি শিমুলের রাজ্যে সবাই বোবা হলেও কথা বলতে শিখেছে কেউ কেউ। জেলা আওয়ামী লীগকে পরিবারতান্ত্রিক করার মাধ্যেমে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে একছত্র আধিপত্য তার। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভোটের মাধ্যেমে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হন শিমুল। তারপর থেকে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রনণে নেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা আরও জানান, টাকার বিনিময়ে এমপি শিমুল বিভিন্ন সময় জামায়াত-বিএনপির লোকজনদের দলে ভিড়িয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগ ও মহিলা আওয়ামীলীগে তার পরিবারের ১১জনকে পদসহ সদস্য করেছেন। সেগুলো হচ্ছে-  শামীমা সুলতানা জান্নাতী, এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী এবং জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি; এমপি শিমুলের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম শরীফ যিনি ২০১৪সালের পূর্বে জাসদের নেতা ছিলে, পরে নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হয়েছেন; জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সীমা ইসলাম, তিনি শরিফুল ইসলামের স্ত্রী এবং এমপি শিমুলের ভাবি; সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কোষাধক্ষ্য, নাটোর পৌর আওয়ামীলীগ, ২০১৪ সালের পূর্বে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন; সাজেদুল ইসলাম সাগর, এমপি শিমুলের ছোট ভাই, বর্তমানে পৌর আওয়ামীলীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ; সিনথিয়া ইসলাম, সাগরের স্ত্রী, সদস্য নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ; এমপি শিমুলের বোন নাসিমা চৌধুরী, কোষাধক্ষ্য নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ; সাজেদুল ইসলাম খান চৌধুরী (বুড়া চৌধুরী) এমপি শিমুলের ভগ্নিপতি, তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য; মীর নাজমিন ইসলাম, এমপি শিমুলের ছোট বোন, সাংগঠনিক সম্পাদক, নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ; এমপি শিমুলের ভগ্নিপতি মীর আমিরুল ইসলাম জাহান, কোষাধক্ষ্য,নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ, একসময় নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া এমপি শিমুলের ভাগ্নে মীর নাফিউল ইসলাম অন্তর, নাটোর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে মারপিটের কারণে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম স্বপন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক রাবি শিক্ষক সুজিত সরকার রচিত “নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ ” বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শিমুলকে রাজাকারের সন্তান বলে দাবি করেন। বইয়ের ৬০০ পৃষ্ঠায় ২১ নং সিরিয়ালে হাসান আলী সরদার নামের ব্যক্তি শিমুল এমপির বাবা। এই তালিকা এখন নাটোরের মানুষের হাতে হাতে রয়েছে। তার মেজ ভাই সিরাজুল ইসলাম সিরাজ সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগদান করা সদস্য। ব্যবসায়িক অংশীদার আক্কু বিহারী স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের নাগরিক। তিনিও এখন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক। জেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মালেক শেখ জানান, এমপি শিমুল দলে পরিবারকরণ করতে গিয়ে পরিবারের ১১ জন সদস্যসহ , ভগ্নিপতি বেয়াইসহ বিএনপি জামায়াত শিবিরসহ যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের জেলা আওয়ামীলীগে পদ পদবি দিয়েছেন। এমনকি তার পিএস আকরামুল ইসলাম ছিলেন শিবিরের একজন সদস্য। করোনাকালীন অর্থ সহায়তার নামে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজীর অভিযোগও আছে।  নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, সদ্য নির্মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক নার্স ও প্রশাসনিক অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও জনগণ থেকে বিচ্ছন্ন এ নেতা এমপি শিমুল নিজের ব্যাক্তি ইমেজ ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেছেন। এ ব্যাপারে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, জেলার কিছু নেতা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ২০১৪সালের নির্বাচনের আগে যাতে আমি মনোনয়ন না পাই, সেজন্য আহাদ আলী সরকার এবং শরিফুল ইসলাম রমজান অর্থের বিনিময়ে পরিকল্পিত ভাবে বইটি ছাপিয়েছে। নাটোরের সুসংগঠিত রাজনীতি ধ্বংস করছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ বিষেয়ে আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাবো। পরিবারতান্ত্রিক করা কথা জানতে চাইলে তিনি আরও  বলেন, আমি নৌকাবিরোধী ও গঠনতন্ত্রর বাহিরে কিছু করিনি। যারা যোগ্য তাদের দিয়েই কমিটি করা হয়েছে। হাসপাতাল উদ্বোধনের ব্যাপারে তিনি জানান, করোনা মহামারী মোকাবেলা করতেই জেলার সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের  মধ্যে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here