ফাতেমা ইরাজ
বর্তমান বিশ্বের ব্যবসা বানিজ্য একটা বিশাল প্লাটফর্ম হলো ই-কমার্স। ই-কমার্স বর্তমান বিশ্বের বেকারত্বকে ঘোচাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে। ই-কমার্সের সুপ্রভাব বাংলাদেশকেও বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করছে। নানান ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজকে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে লক্ষ কোটি মানুষ।
বাংলাদেশের মহিলাদের জন্য ই-কমার্স অনেক বড় রকমের আশির্বাদ। ই-কমার্সে সফল উদ্যোক্তার আশি ভাগই নারী। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালে এসেও মহিলাদের ঘরের বাইরে বেড়িয়ে চাকুরী করা ব্যবসা করাটা অনেক কঠিন। কারো কারো পারিবারিক সমস্যা থাকে, কারো বা নিরাপত্তাহীনতার ভয়। আবার অনেক মায়েরা চান সন্তানকে শতভাগ সময় দিতে তাই আত্মনির্ভরশীল হওয়া আর হয়ে ওঠে না। সেখানে দাঁড়িয়ে ই-কমার্স যে তাদের জন্য একপ্রকারের বেহেস্তের নহরের মতো। ঘর সংসার সামলে সন্তানকে চোখের সামনে রেখেই হতে পারছেন আত্মনির্ভরশীল।
আবার বাইরে চাকরি করা মানুষের জন্যও এটা ভীষণ রকম স্বস্তির ব্যাপার। সময় সুযোগ মতো ফোন করলেই চলে আসছে প্রয়োজনীয় সব কিছু। তা হোক হিরা কিংবা জিরা। চাকরিজীবী মহিলা কিংবা ব্যাচেলররা ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজন মতো মসলা বাটা, কাটা ধোয়া মাছ, কিংবা রান্না করা খাবার। তাদের জীবন কিছুটা হলেও সহজ হয়ে উঠেছে। তেমনি অনেক প্রতিবন্ধী মানুষও এই প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে অন্যের গলগ্রহ থেকে বেড়িয়ে আসছে, আত্মনির্ভশীল হচ্ছে, আবার তা থেকে নিজের মতো অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। এখন কেউ আর তাকে বোঝা ভাবে না। শুধু যে হিরা বা জিরা নিয়েই ই-কমার্স চলছে, তা কিন্তু নয়।
চারদিকে চোখ রাখলেই গৃহকর্মীর বড় অভাব, সে অভাব নিরসনে অনলাইনে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান আমাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে গৃহকর্মী। তবে এতোকিছুর মধ্যেও বাংলাদেশের ই-কমার্সে অনেক অসুবিধা আছে। নানান রকম প্রতারনার স্বীকার হচ্ছে ভোক্তারা। পন্যের মান নিয়ে নানা সময়ে উঠছে নানা প্রশ্ন, কোথাও কোথাও অগ্রীম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ারও নজির মিলেছে অনেক।
অনলাইনে আজকাল প্রডাক্টের দাম লেখা থাকে না,ইনবক্সে ডেকে নিয়ে নানান ভাবে প্রতারনা করে,এর মধ্যে অধিকমূল্যের ব্যপারটাই বেশি।তাছাড়া মূল্য পন্যের সাথে দেয়া থাকলে ক্রেতাও তার বাজেট অনুসারে পন্য নির্বাচন করতে পারে,এতে বিক্রেতারও সুবিধা হয় অযথা বার বার পন্য সম্পর্কে বলতে হয় না।
দ্রব্যমূল্যের নির্দিষ্ট দাম না থাকায়, কিংবা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকায় নিম্নমানের পন্য দিয়ে টাকা হাতিযে নিচ্ছে অবলীলায়। ডেলিভারি চার্জ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় অনলাইন বিক্রেতাদের ব্যবহার অসমীচীন। কথায় বলে ব্যবহার ব্যবসার দ্বিতীয় মূলধন। তবে একে যেন উড়িয়েই দিতে চান অনলাইন ব্যবসায়ীরা। আসলে হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট পেয়ে অনেকেই উদ্দোক্তাবনে গেছেন। অধিকাংশেরই ব্যবসা নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাই তারা জানেন না ক্রেতার সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়। আবার অনেক সময় বিক্রেতারাও নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেমন ক্রেতা পন্য অর্ডার করেন, মানসম্মত হলেও তা ফিরিয়ে দেন। হয়রানি করার জন্য ভুল ঠিকানা ও ভুল ফোন নাম্বার দিয়ে অর্ডার করেন। কেউ কেউ অর্ডার করে ফোন বন্ধ করে রাখেন তাছাড়া অনেক সময়ই ডেলিভারি সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভোগেন। যেহেতু ই-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলে, দেশের বেকারত্ব নিরসনে কাজ করে, নারীকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে সেক্ষেত্রে সরকারের এর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিৎ। যেমন প্রতারনা এড়াতে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা, পন্যের মূল্য নির্ধারণ, জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করা, ডেলিভারি সংক্রান্ত সমস্যা নিরসন, এবং ব্যবসায়ীর সদাচরণের জন্য শিক্ষা প্রদান। আমার মনে হয় এধরণের পদক্ষেপে আমাদের দেশের, মানুষ ভরসা পাবে, এবং ই-কমার্সে উৎসাহ পাবে।