ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গঠিত বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আংশ নিতে যাচ্ছে।

আজ রবিবার দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব অনুষ্ঠেয় সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরে বিএনপি ও ২৩ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শনিবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে দলীয় শীর্ষনেতারা মত দেন। এ বিষয়ে রাতে ২৩ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন বিএনপির নেতারা। ওই বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ বৈঠকে বিএনপির নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দলীয় ফোরামে গৃহিত সিদ্ধান্তে কথা জানায়। এতে সায় দেন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তার পরামর্শে রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এতে সরকারকে ফাঁকা মাঠা গোল দেওয়ার সুযোগ বন্ধের যুক্তি তুলে ধরে ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকেও আলাদা সম্মেলন করা হবে। তবে তার আগে রোববার দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করে তার মতামত গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়. জাতীয় ঐক্যজোটর পক্ষ থেকে রবিবার সকালে তফসিল পেছানো ও জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে চিঠি দেয়া হবে। চিঠিতে উল্লেখ করা হবে, যদি আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আবার অনেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন। নিবন্ধিত দলগুলোর হবে নিজ দলের। আর অনিবন্ধিত দলগুলোর প্রতীক হবে বিএনপির প্রতীক। তবে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী গতকাল বৈঠকে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। তারা একদিন সময় নিয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। তারা বলেছেন,আমরা জোটগত না স্বতন্ত্র নির্বাচন করবো তা আজ-কালের মধ্যে জানাবো।

নির্বাচনে শরিকদের মধ্যে আসন বন্টনের বিষয়ে সমন্বয়কারী করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।

বিএনপির নীতিনির্ধারক একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারপারসনবেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ভোটে থাকবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা এ দলটি। নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে থাকবে ২০-দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে নির্বাচনী তফসিল আরও এক মাস পেছানোর দাবি জানানো হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। মূলত চাপের মধ্যে থাকলেও কৌশলগত কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তাঁদের মতে, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার চেয়ে অংশ নেওয়াই বেশি লাভজনক। দলের অস্তিত্বের প্রশ্নেই বিএনপিকে অংশ নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুক্রবার ঢাকায় সবুজ সংকেত পাঠিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করে আসন বণ্টনের বিষয়টিও নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন তারেক। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনেই আসন বণ্টনে কমিটির প্রধান ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। লন্ডনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এবারও ওই কমিটির প্রধান তাঁকেই করা হচ্ছে।

তারেক রহমানের ওই নির্দেশনার পরই শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি এ নিয়ে দুই জোটের শরিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে। বৈঠকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বিএনপি তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানালে দুই জোটই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে দলটির পক্ষে সই করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্মতি আগেই নেওয়া আছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে ফখরুলেরই সই ছিল।

সূত্র আরও জানায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রের ছোট একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। তারা নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও ওই আন্দোলন সফল হবে কি না তা নিয়ে আবার সংশয় রয়েছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। জোটের শরিক অন্যান্য দল মূলত বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও ভোটারদের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে তারাও নির্বাচনে যেতে রাজি হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here