নিউজবাংলা ডেস্ক: ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের কতগুলো আচরণের বহিঃপ্রকাশ। মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির দ্বারা গঠিত এক প্রকার সামাজিক মূলধন। নৈতিকতা ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় যেটা ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
মূল্যবোধ আর নৈতিকতার সমন্বয়ে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে; কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—বর্তমান সমাজে এর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেটা কখনোই সভ্য সমাজ ব্যবস্থার জন্য সহায়ক নয়। আধুনিক সভ্যতা দিয়েছে বেগ, নিয়েছে আবেগ যার ফলে ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিদেশি সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমু, উন্মুক্ত পর্নোগ্রাফিক ভিডিও ছাড়াও দেশের রেডিওতে প্রচলিত বাংলা-ইংরেজি ভাষার সংমিশ্রণ নতুন কিছু নয়। পড়ার সময়ের চেয়ে ফোন ব্যবহারে সময় বেড়ে যাওয়ায় তরুণ-তরুণীর মধ্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা অথবা নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে যেমন নৈতিক মূল্যবোধের ফাটল ধরছে অন্যদিকে ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ঘুষ, গুম, খুন এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। সম্প্রতি ক্যাসিনো, অবৈধ দেহ ব্যবসা ও দখলদারিত্ব, জামালপুরের ডিসি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের বালিশ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের একটি পর্দার দাম, পুকুর খননের নামে বিদেশে প্রশিক্ষণ, দলীয় সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, এমনকি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে অস্বীকার করা যাবে না। এ সব ঘটনা জাতিকে কী বার্তা দিচ্ছে? ঘুমের মানুষকে জাগানো যায়; কিন্তু যে না ঘুমিয়েও ঘুমের ভান করে থাকে তাকে আপনি জাগাবেন কীভাবে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুগোপযোগী ‘জিরো টলারেন্স’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় সব মহল থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে বলা হচ্ছে; কিন্তু দেখার বিষয়, এ অভিযান কত দিন চলে। নতুন প্রজন্ম মনে করে, সব রাজনৈতিক দল ইতিবাচক চিন্তাধারায় ফিরে আসবে এবং সবার সাহায্য-সহযোগিতায় বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নের মডেল। শুধু আবকাঠামোগত উন্নয়ন না করে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। দেশ গড়ার কাজে তরুণদের চিন্তাভাবনার সুযোগ করে দিতে হবে এবং তাদের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক-মূল্যবোধের প্রচারণা বাড়াতে হবে। নৈতিক-মূল্যবোধ আর আইনের শাসন একে অন্যের পরিপূরক। আপাতদৃষ্টিতে, আইনের শাসনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও ব্যক্তিত্ব তথা নৈতিক-মূল্যবোধের প্রাধান্য কোনো অংশে কম নয়। আজ হাজার হাজার লাখ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকাসক্ত ছাড়াও বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের দায়ভার কে নিবে? তাই নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চার জন্য সরকারের ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেটি স্ট্র্যাটেজি বা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল-২০১২-এর প্রতি আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ কখনোই খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে না। প্রমথ চৌধুরীর সেই বিখ্যাত উক্তিটি ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’ কাজেই স্লোগান হওয়া উচিত, ‘আমি জাগলে জাগবে দেশ! গড়বো মোদের বাংলাদেশ’।
লেখক : মো. ওয়াদুদ রহমান ওয়ালিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়