নিউজবাংলা ডেস্ক:

স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এক জরুরি সভায় তাঁর পদত্যাগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা ও আবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তমোমি ইনাদা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

শিনজো আবে পদত্যাগ করলে তাঁর জায়গা কে নেবেন, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি। অন্য আইনপ্রণেতারাও আবের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্বাস্থ্যগত কারণে বেশ কয়েক দিন ধরেই আবের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই তাঁর পদত্যাগের খবর আসতে শুরু করেছে।

ইনাদা সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরসূরি না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন আবে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নির্বাচনে উত্তরসূরি খোঁজা হবে। শিনজো আবে সরাসরি পদত্যাগ করলে কিংবা পদত্যাগের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করলে এলডিপি পার্টিতে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে, যেখানে তাঁর বিকল্প একজনকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে। এরপর সংসদীয় ভোটাভুটির মাধ্যমে নবনির্বাচিত পার্টি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে।আজ শুক্রবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন এনএইচকে-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ আবের স্বাস্থ্যের দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তিনি চান না ‍তাঁর ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের কারণে জাপান সরকার কোনো সমস্যায় পড়ুক। স্থানীয় সময় আজ বিকেল পাঁচটায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন বলে জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ১৬ আগস্ট সকালে টোকিওর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর এই অনির্ধারিত চিকিৎসাগ্রহণকে সরকারিভাবে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমে নানা জল্পনা ইতিমধ্যে ডানা মেলতে শুরু করে।

এএফিপর তথ্য অনুযায়ী, আগে থেকেই আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগছেন তিনি। তবে নতুন ওষুধে এত দিন তা নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিবিসির খবরে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরেই আলসারজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন আবে। তবে সম্প্রতি তাঁর শারীরিক সমস্যাগুলো তীব্র হয়েছে।

টোকিওর কেইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে আবে প্রতি ছয় মাসে একবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য হাজিরা দিলেও এবারের সময়সূচি নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন তৈরি হয়। ষাণ্মাসিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য এর আগে গত ১৩ জুন তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগামী ডিসেম্বর মাসে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তাঁর সেখানে যাওয়ার কথা।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় রক্তবমি করেছিলেন উল্লেখ করে একটি সংবাদ সাময়িকীতে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছিল।

ক্ষমতাসীন এলডিপি পার্টি থেকে বরাবরই বলা হচ্ছিল, শারীরিকভাবে মেয়াদ পূরণের মতো সুস্থতা রয়েছে তাঁর। এমনকি গত মঙ্গলবারও এলডিপির ট্যাক্স প্যানেলের প্রধান আকিরা আমারি রয়টার্সকে বলেন, এই মুহূর্তে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা আবে দেবেন না।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সামাল দেওয়ায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই গত বছর অক্টোবর মাসে ভোগ্যপণ্যের কর বৃদ্ধি জাপানের অর্থনীতির ওপর আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছিল।করোনা সামাল দেওয়ায় সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি ব্যয়বহুল কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া অর্থনীতির সেই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তোলে। ফলে, প্রধানমন্ত্রী জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়া এড়িয়ে চলছিলেন। এ ছাড়া সর্বশেষ যে কয়েকটি আনুষ্ঠানিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে, সেখানে তাঁকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। অনেকেই ধারণা করতে শুরু করেছিলেন, ক্ষমতাসীন দল উদার গণতন্ত্রী পার্টির (এলডিপি) আগামী মাসের নির্ধারিত সম্মেলনে দলীয় সভাপতির পদ থেকে তিনি হয়তো সরে দাঁড়াবেন।

জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তিনি ২০১২ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচন, আইন লঙ্ঘন ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এত বছর ধরে টিকে আছে আবের সরকার।

২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রিয়তায় ব্যাপক হ্রাস, এর বিরূপ প্রভাবে সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে দলের পরাজয়, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের দুর্নীতি, নিজের দুর্বল শরীর—সব মিলিয়ে মাত্র এক বছর পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। তবে ২০১২ সালে অন্য রকমভাবে ফিরে আসেন আবে। সংবিধানকে সংশোধন করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী সামরিক ও পুনর্গঠিত অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here