নিউজ বাংলা ডেস্ক :
ভুল থেকে শিক্ষা হয়নি সরফরাজ আহমেদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছিল ৪১ রানে হেরে। কাল ভারতের বিপক্ষেও একই কাজ করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে টসে জিতে আগে বোলিং নিলেন সরফরাজ। এর আগে ছয় সাক্ষাতে এই কাজটি করার সাহস দেখায়নি পাক-ভারতের কোনো অধিনায়ক। তবে ইতিহাস বদল করলেও ভাগ্যের বদল হয়নি এ ম্যাচে। বিশ্বকাপের সপ্তম সাক্ষাতেও পাকিস্তান হেরেছে ৮৯ রানে।
ম্যানচেষ্টারের ব্যাটিং সয়াহক উইকেটে রোহিত শর্মার ১৪০ ও বিরাট কোহলির ৭৭ উপর ভর করে পাঁচ উইকেট ৩৩৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফা খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৩৫ ওভারে ছয় উইকেটে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৬৬।
তখন ১৫ ওভারে পাকিস্তানে প্রয়োজন ছিল ১৭১ রান। এসময়ে আবার বাধ সাধে বৃষ্টি। পরে আবার খেলা শুরু হলে ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তানের নতুন টার্গেট দাড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২। শেষ পাঁচ ওভারে ১৩৬ রান। অসম্ভব টার্গেটে পাকিস্তান থামে ২১২ রানে। চলতি আসরের পাঁচ ম্যাচে পাকিস্তানের এটি তৃতীয় হার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি জয় আছে দলটির। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপর ম্যাচটি ভেসে গেছে তাদের। অপরাজয় ভারতে এটি তৃতীয় জয়। বৃষ্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে তাদের।
বড় ম্যাচের তকমা পাওয়া ম্যাচে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো পাকিস্তানকে। একেতো বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি পাকিস্তান। তারওপর বিশ্বকাপে এতো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল না কোনো দলের। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩২৯ রান তাড়া করে জিতেছিল আয়ারল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ঢাকায় আইরিশরা জিতেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেখানে ৩৩৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান মুখ থুবড়ে পরে ম্যাচের শুরুতেই। প্রায় সাতের কাছাকাছি রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান প্রথম পাঁচ ওভারে এক উইকেটে সংগ্রহ করে মাত্র ১৪ রান। তবে সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্ঠা করেছেন বাবর আজম ও ফখর জামান। এরা দু’জন দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রান সংগ্রহ করলে নড়েচড়ে বসে পাকিস্তানের সমর্থকরা। তবে সেই আশায় পানি ঢেলেদেন কুলদিপ জাদব। দারুণ খেলতে এই দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করেন জাদব। তার দূর্দান্ত এক ডেলিভারিতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৪৮ রান করা বাবর আজম। ৬২ রান করা ফখর জামানকে চাহালের ক্যাচে পরিণত করেন এই চায়নাম্যান স্পিনার। তাদের বিদায়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পরে পাকিস্তানের ইনিংস। ১১৭/১ থেকে ১২৯/৫ এ পরিণত হয় ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নরা। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৩৫ ওভারে ১৬৬ রান। তখন তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ ওভারে ১৭১ রান। বৃষ্টির পর আবার খেলা শুরু হলে শেষ ৩০ বলে ১৩৬ রানের প্রয়োজন পরে পাকিস্তানের। ইমাদ ওয়াসিমের অপরাজিত ৪৫ ও সাদাব খানের ১৮ রানের ইনিংসে ২১২ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।
রান তাড়া করে জেতায় ওস্তাদ বিরাট কোহলির ভারত। সে কারণেই কি না, টসে জিতেও ম্যানচেস্টারের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন সরফরাজ আহমেদ। তা অবশ্য পাকিস্তানের বোলিংয়ে বোঝা যায়নি। সরফরাজের সিদ্ধান্ত যে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের পছন্দ হয়নি তা বোঝা যাচ্ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামার আগেই এক টুইট বার্তায় শোয়েব আখতারতো বলেই বসলেন, ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মস্ত বড় ভুল করেছেন সরফরাজ। সরফরাজের ভুল বোঝাতে গিয়ে শোয়েব টেনে এনেছেন দুই বছর আগে বিরাট কোহলির নেওয়া একটি সিদ্ধান্তকে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন কোহলি। রান তাড়ায় নিজেদের সাফল্যকে মাথায় রেখে ব্যাটিং উইকেটেও আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোহলি। ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১৮০ রানে হেরেছিল ভারত। কাল একই ঘনটার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ম্যানচেষ্টারের ওল্ড টাফোর্ড স্টেডিয়ামে। শোয়েবের টুইটের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের ২৪তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন রোহিত শর্মা। মাত্র ১১৩ বলে ১৪০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন ভারতীয় ওপেনার। ভারতের বড় সংগ্রহে দ্রুত ১১ হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করা বিরাট কোহলির অবদান ৭৭। ওল্ড ট্রাফোর্ডে মোহাম্মদ আমির না থাকলে লক্ষ্যটা সাড়ে তিনশ’র নিচে নামাতেই পারতো না পাকিস্তান। ৪০ ওভারে ২৫০ করা ভারত তিনশ পেরিয়েছে ৪৬তম ওভারে। উইকেটে ছিলেন বিরাট কোহলি। তবু যে শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩৮ রান তুলতে পেরেছে ভারত, তার কারণ আমির। অন্য বোলারদের রান বন্যার মাঝেও মাত্র ৪৭ রানে ৩ উইকেট তার। উইকেট তিনটি আবার স্লগ ওভারে ভয়ঙ্কর হার্দিক পান্ডিয়া, বিরাট কোহলি ও মাহেন্দ্র সিং ধোনির। ইনিংসের প্রথম ভাগটা অবশ্য নিজের করে নিয়েছেন রোহিত শর্মা। বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন রোহিত। কোহলির ১০৭ রান ছাপিয়ে রোহিতের ১৪০ এখন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। রেকর্ড হয়েছে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিরও। গতকাল ৫৭ রান করতে পারলেই শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১১ হাজার রানের মালিক হতেন কোহলি। বৃষ্টিতে খেলা থামার আগে কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৬২ বলে ৭১ রানে। বৃষ্টির পর আর মাত্র ৬ রান যোগ করেছেন। ৬৫ বলে ৭ চারে ৭৭ রানে ফিরেছেন ভারত অধিনায়ক। শুধু ভারতীয় খেলোয়াড়েরা নন, রেকর্ড করেছেন এক পাকিস্তানি খেলোয়াড়ও। তবে সেটি গৌরবের নয়, লজ্জার। ৯ ওভার বল করে ৮৪ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট পেয়েছেন হাসান আলী। বিশ্বকাপে কোনো পাকিস্তানি বোলারের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান দেয়ার রেকর্ডটি গতকাল নিজের করে নিয়েছেন হাসান আলী। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট পাওয়া হাসান আলীকে এদিন পাওনাটা সুদে-আসলেই বুঝিয়ে দিয়েছেন রোহিত-রাহুলরা।