নিউজবাংলা প্রতিবেদন
রাজনীতির বিশ্লেষক লেখক সাংবাদিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ তোশারফ আলী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জেল জুলুম ও কারাভোগের অনন্য নজীর স্থাপন করেছিলেন। একটি জাতীর মানুষকে কতটা ভালোবাসলে একজন মানুষ মত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নির্যাতন ও দীর্ঘ সময় কারাভোগ করতে পারেন। শিক্ষাজীবনে বঙ্গবন্ধুর সাহচার্য লাভের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছাত্রজনতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে এনেছিল। নির্ভরশীলতা ও পদনত করে রাখার ঔপনিবেশিক কৌশল নিয়েছিল পাকিস্তান। তাদের রাজনৈতিক অপকৌশলের মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মসূচী আজও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। তিনি সাহসী মানুষ ছিলেন, কাপূরুষ ছিলেন না। তিনি দয়া মায়া ও মানবিকতার আঁধার ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মানুষের মুক্তি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন তিনি।
তোশারফ হোসেন বলেন, মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার, আব্রাহাম লিঙ্কন হত্যার স্বীকার হয়েছেন কিন্তু আমাদের জাতীর পিতার মতো সপরিবারে এভাবে নৃশংস হত্যার স্বীকার হননি তারা। এটি পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু কেবল রাজনীতির মহানায়ক কিংবা স্বাধীনতার স্থপতি ছিলেন না, অসমাপ্ত আত্মজীবনী লিখে একজন ইতিহাসবিদের কাজ করে গেছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল।
তিনি জাতীয় শোক দিবসে সারেঙ সাহিত্য সভা আয়োজিত এক ভার্চয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী।
ড. তপন বাগচী বলেন, স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে আমাদের লোক কবিরা যাত্রা, লোকগান ও কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছেন। আমাদের শিক্ষিত সমাজে সেভাবে এগিয়ে আসেননি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত ৩২ টি যাত্রাপালা যার প্রমাণ। অথচ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাত্র তিনটি নাটক রচিত হয়েছে। তিনি বলেন একজন ভবা পাগলা কালনায় বসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যা রচনা করেছেন, আমাদের আধুনিক কবিদের মাঝে সেরকম উদ্যোগ ছিলনা। স্বাধীনতা উত্তরকালে সরকারি আনুক‚ল্য পাবার জন্য কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক দিক এখনো আমাদের সাহিত্যে উঠে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর তর্জনী নিয়ে একটা নাটক হতে পারে, তার মোটা চশমা নিয়ে একটা নাটক হতে পারে, তার পাইপ নিয়ে একটা নাটক হতে পারে। অথচ তেমন কিছুই হয়নি। ড. বাগচী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান ও কবিতার বিশ্লেষণ করেন। প্রসঙ্গক্রমে বিভিন্ন কবির কবিতার উল্লেখ করেন। তিনি ব্গবন্ধুকে নিয়ে লোকিকতা নয় তার চেতনাকে মনে প্রাণে ধারণ করা আহবান জানান।
সারেঙ সম্পাদক আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো’ গান পরিবেশন করেন ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী, কবি ও লেখক মালা মিত্র, আবৃত্তি করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি নাসরীন গীতি, আলোচনা করেন লেখক ও মানবাধিকারকর্মি রুহুল ইসলাম টিপু, কবি হামীম হাফিজুল্লাহ প্রমুখ।