নিউজ বাংলা ডেস্ক: গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর মারা পরছে শত শত নিরীহ মানুষ। আচ্ছা বলেন তো বজ্রপাতের দেশ নামে পরিচিত দেশ কোনটা? সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে কোথায়? কোনোটারই উত্তর বাংলাদেশ নয়। তাহলে এই দেশে বজ্রপাত কি আসমানী গজব? বজ্রপাতের দেশ হিসেবে ভুটান পরিচিত আর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিলে। কিন্তু এ সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতে মৃত্যুর বড় কারণ খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে অধিকাংশের অসচেতনতা। এসব কারণে এই দেশে বজ্রপাতের বেশি শিকার হন খোলা মাঠে কাজ করা কৃষক বা জেলেরা। তাহলে আপনি বলবেন ভুটান, ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিল সহ অন্যান্য বজ্রপাতপ্রবণ দেশের খোলা স্থানে মানুষ কোনো কাজকর্ম করেনা? বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশ্লেষণ করে এসব প্রশ্নের উত্তর শেষে দেওয়ার চেষ্টা করব। আগে বজ্রপাতে সম্পর্কে কিছু তত্ত্বীয় জ্ঞান লাভের চেষ্টা করি।
পানিচক্রের সাথে বজ্রপাতের একটা নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। সবাই জানি জলাশয় থেকে পানি সৌরতাপে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ আকারে আকাশে জমা হয়। এই মেঘই হল বজ্রপাতের শক্তি সরবরাহক। আকাশে মেঘ বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মত আচরণ করে। বিশেষ এক ম্যাকানিজমের মাধ্যমে জমাকৃত মেঘের ওপরের অংশ পজিটিভ এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে চার্জিত হয়। মেঘ কিভাবে চার্জিত হয় এই ম্যাকানিজম নিয়ে Hydrologistদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ম্যাকানিজম হচ্ছে, বাষ্পীভূত পানি কণা যখন ওপরে উঠতে থাকে তখন তারা এই পানিকণা নিচের দিকের ঘনীভূত বৃষ্টি কিংবা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। এতে ওপরের দিকে উঠতে থাকা বাষ্প রূপী পানিকণা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়। এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয় এবং ইলেকট্রন হারানো পজিটিভ চার্জিত বাষ্পকণা মেঘের একেবারে উপরপৃষ্ঠে চলে যায়। এভাবে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারকের (ক্যাপাসিটর) বৈশিষ্ট্য লাভ করে। মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। বাষ্পকণা ও মেঘে সংঘর্ষ চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠের আরো গভীরে চলে যায়। ফলে ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখন বজ্রপাতের জন্য শুধু বাকি যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু পরিবাহক বা কন্ডাক্টর (Miller, Environmental Chemistry).
বাতাসতো বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাহলে বজ্রপাত ঘটার জন্য মাধ্যম কোথা হতে আসবে? মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়। যাকে বলে Dielectric Breakdown। মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন প্রচণ্ড শক্তিশালী হয় (প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় দশহাজার ভোল্ট), তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়নিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বাতাস আয়নিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরি করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়। এছাড়া আয়নিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ার কারণে এতে ধাতব বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে বিদ্যমান। এসময় বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। সাধারণত উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়া বজ্রপাত বেশি হয়। উত্তপ্ত বায়ু যখন দ্রুতগতিতে ঠাণ্ডা হয়, তখন বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। এই বজ্রমেঘের ভেতরে বাতাসের দ্রুতগতির আলোড়নের সৃষ্টি হয়। স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্ট বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ উচ্চ তাপমাত্রা সৃষ্টি করে, তখনই তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। বাতাসের মধ্য দিয়ে দ্রুত প্রবাহিত বজ্রবিদ্যুৎ প্রায় ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। ফলে বায়ুর দ্রুত প্রসারণ হয় এবং তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। আকাশ থেকে মাটিতে ছাড়াই আকাশ থেকে আকাশে কিংবা মেঘ থেকে মেঘে অনেক সময় সরাসরি মেঘেরপুঞ্জের মধ্যেও বজ্রপাত হয়ে থাকে। (Raccon, General Applied Physics and Electronics).
তত্ত্বীয় কথা গুলোকে ছোটকরে বললে দাঁড়ায়, জলীয়বাষ্প পূর্ণ বাতাসে ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ যতই দ্রুততর হয়, বজ্রপাত তত বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। মূলত পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে বজ্রের সৃষ্টি হয়। এসময় মেঘের ভেতরে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের সম্প্রসারণ ঘটে। এতে প্রচুর ঝলকানি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে বজ্র। তখন এর সামনে মানুষ বা পশুপাখি যা ই পড়ে, তার নির্ঘাত মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতের নিয়ে পবিত্র কোরআনে একটি বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড।” (সুরা রা’দ, আয়াত : ১৩).
বজ্রপাত হলো আল্লাহ তাআলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এমনটি করেন না।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ভারতের এবং নেপালে বজ্রপাত হয়। তবে এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে বজ্রপাত হলেও সেখানে মৃত্যুর হার এতো বেশি নয়। বজ্রপাতে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক মানুষ প্রাণ হারালেও বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ কী এ নিয়ে বলার মতো কোনো গবেষণা হয়নি। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। একদল কথিত পরিবেশের বাদীদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বজ্রপাতের প্রবণতা এমনিতে বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশ আরো বেশি। বলতে পারেন এগুলো দায়সারা কথাবার্তা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ এর মতে
”বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এরকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।” (BBC বাংলা).
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাওহিদা রশিদের মতে, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক আছে। তিনি মনে করেন বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটি বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গড় তাপমাত্রা ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এই সময় সকালের দিকে প্রচণ্ড তাপমাত্রা হয়। আর তখন এটি অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানেই হল ঝড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। বছরে এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বার শতাংশ বজ্র ঝড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ তাপমাত্রা যত বাড়বে, তখন জলীয় বাষ্প বা এ ধরনের শক্তিও তত বাড়বে। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)
বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে বজ্রপাত কমবেশি হয়। তবে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। এসব অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে এপ্রিল এবং মে মাসের কিছু সময় ধরে
তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এজন্য বলা হয়, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই, বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি। কারণ ওখানে জলীয় বাষ্প বেশি উৎপন্ন হয়।
গবেষকদের মতে, বজ্রপাত প্রকৃতির একটি বিষয় এবং এটি প্রাকৃতিক নিয়মে হবেই। তবে এতে প্রাণহানি কমানোর তো সুযোগ রয়েছে। বজ্রঝড় যখন শুরু হয়, এর তিনটি ধাপ আছে। প্রথম ধাপে বিদ্যুৎ চমকানি বা বজ্রপাত শুরু হয় না। প্রথমে মেঘটা তৈরি হতে থাকে এবং সেই সময় আকাশের অবস্থা খুব ঘন কালো হয় না। একটু কালো মেঘের মতো তৈরি হয়। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকায়। আর তখনই মানুষকে সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি পরামর্শ হলো খোলা মাঠে তালগাছের মতো উচু গাছগুলো রোপণ করা, এটি বজ্র প্রতিরোধ বেশি কাজে দেবে। কিন্তু কিছু প্রকল্পের অধীনে তালগাছ লাগানো হচ্ছে রাস্তার পাশে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কেননা রাস্তার পাশের তালগাছের ওপর পতিত বজ্রপাত ঘুরে ফিরে মানুষ কিংবা গাড়ির ওপরই পড়বে। তবে ঘন বন তৈরি করা যায় এটি ব্রজপাতে প্রতিরোধে কার্যকর। কারণ বন পরিবেশের তাপমাত্রা কমায়। তাই ঝড়ের সময় গ্রামে ছোট ছোট গাছের ঝোঁপ থাকলে লোকজন সেখানেও আশ্রয় নিতে পারে। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টিকে এখন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই বিবেচনা করছে এবং ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া মন্তণালয় থেকে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের আটটি স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর জনসচেতনতার জন্য কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। এসব নির্দেশনাসমূহ হলো-
১. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
২. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
৩. খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান।
৪. কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।
৫. খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে চার মিটার দূরে থাকতে হবে।
৬. ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
৭. ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৮. বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকের মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।
৯. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময়ে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করুন।
১০. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কনক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
১২. ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন।
১৩. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
১৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
১৬. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
১৮. বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
১৯. বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির থাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোনো কনক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
২০. বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
সর্বশেষ একটি কথা বলে শেষ করতে চাই, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়; মহান সৃষ্টিকর্তাও আমাদের সকলকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
লেখক: মোঃ মোশারফ হোসাইন
সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জয়পুরহাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here