নিউজ বাংলা ডেস্ক:

ক্যাড ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন কুয়েটের কিবলার
সিএডি (কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন) বা ক্যাড হলো এমন এক সফটওয়্যার, যাতে সূক্ষ্ম ঘড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে বিশাল উড়োজাহাজ, সবকিছুর ভার্চ্যুয়াল ত্রিমাত্রিক মডেল বানিয়ে ফেলা যায়। এই ক্যাডকে বলা হয় প্রকৌশলীদের ভাষা। আইআইটিতে ক্যাড প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তিন সদস্যের দল—কিবলার। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যরা হলেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাকসুদুল আলম, সুমিত চন্দ ও সাকিব তানভীর।

প্রথম থেকেই অনিশ্চয়তা পিছু ছাড়েনি কিবলার দলটির। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি উৎসবে নাম নিবন্ধন করে। এখানে চ্যাম্পিয়ন হলে আইআইটিতে সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে। প্রতিযোগিতার তারিখ পিছিয়ে যায়। সেমিস্টার ফাইনালের দুই পরীক্ষার মধ্যে পড়ে প্রতিযোগিতা। সেমিস্টার ফাইনাল নাকি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ? দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে তারা। পরে সিদ্ধান্ত নেয় সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে রাতের গাড়িতে চলে যাবে প্রযুক্তি উৎসবে। ওই দিন রাতের গাড়িতে খুলনায় ফেরে পরের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।

পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, যাওয়া-আসার খরচ নিয়েও অনেক বিড়ম্বনা আর অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয়েছে কিবলার দলের সদস্যদের। সুমিত চন্দ বলেন, ‘যাওয়া-আসার খরচ সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়েরা তখন বললেন, তোরা প্র্যাকটিস কর, আমরা টাকা সংগ্রহ করছি।’ এভাবেই প্রিয়জনদের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হেসেছেন কিবলার দলের সদস্যরা।

ইমরান, সুমিত ও সাকিবেরা কৃতজ্ঞ কুয়েটের ক্যাডারস ক্লাবের কাছে। এই ক্লাবের মাধ্যমেই তাঁরা ক্যাডে আগ্রহী হন। হাতেখড়ি হয় কম্পিউটার এইডেড ডিজাইনে। প্রথম দিকে ব্যর্থতাই ছিল সঙ্গী। হাল ছাড়েননি। এগিয়ে গেছেন দ্বিগুণ উৎসাহে। ইমরান ও সুমিত একবাক্যে বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল কুয়েট ক্যাডারস ক্লাবের সদস্য হওয়া।’ এখন যতটুকু তাঁদের অর্জন, তার পুরোটাই ক্যাডারসের কৃতিত্ব। আত্মবিশ্বাসী কিবলার দলের সদস্যরা বললেন, ‘সেদিন বেশি দূরে নয়, নিজেদের সম্পূর্ণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের প্রোডাক্টগুলোও আমরা ডিজাইন করব। বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে মেইড ইন বাংলাদেশ।’

 

 

রোবটিকসে রানার্সআপ শাবিপ্রবির টিম–বাংলাদেশ
দলের নাম ছিল সাস্ট–ক্র্যাকার–নাট। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তাঁরাই হয়ে গেছেন টিম–বাংলাদেশ। আইআইটির এই উৎসবে রোবটিকস প্রতিযোগিতায় তাঁরা হয়েছেন রানার্সআপ। শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তার গল্প শোনা হলো দলের সদস্যদের কাছ থেকে।

আইআইটির রুরকি ক্যাম্পাসে তখন রোবটিকস প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব চলছে। প্রতিযোগিতাস্থল ঘিরে রেখেছেন উৎসুক দর্শক। প্রতিপক্ষ আইআইটি রুরকির একটি দল। ধারাভাষ্যকার মাইকে হিন্দিতে দর্শকদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘কন টিম জিতেগা?’ উপস্থিত বেশির ভাগ দর্শক চিত্কার করে উত্তর দিল, ‘টিম-বাংলাদেশ!’ কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে টিম বাংলাদেশ এতই ভালো করছিল যে সবাই ধরে নিয়েছিল—টিম বাংলাদেশই চ্যাম্পিয়ন হবে। তবে প্রতিযোগিতার একটি নিয়ম না জানা এবং মোটর নষ্ট হওয়ার দুর্ভাগ্যের কারণে রোবটিকসে টিম-বাংলাদেশ হয় প্রথম রানার্সআপ।

দলের সদস্যরা হলেন শাবিপ্রবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফজলে এলাহী, রবি পাল ও নুসরাত জাহান, গণিত বিভাগের মিনহাজুল আবেদীন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নুর-ই-জান্নাত। তাঁরা সবাই শাবিপ্রবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ফাইনালে ভারতের বেশির ভাগ দর্শক টিম-বাংলাদেশের ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। রবি পালের ভাষায়, ‘তাঁদের মাটি, তাঁদের ক্যাম্পাস, তাঁদের আয়োজন ও আমাদের প্রতিপক্ষও আইআইটির, সেখানে “টিম বাংলাদেশ, টিম বাংলাদেশ…” বলে চিত্কার শোনার অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।’ বাকিরা যোগ করেন, ‘এই ঘটনা আজীবন মনে থাকবে।’

ইইই বিভাগের বড় ভাইদের কাছে রোবটিকসে তাঁদের হাতেখড়ি। এ ছাড়াও অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি তাঁরা। বললেন, ‘শাবিপ্রবির ট্রিপল ই বিভাগের প্রধান আরিফ আহাম্মদ ও জীবেশ কান্তি সাহা স্যারদের কাছে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তাঁরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে আইআইটিতে যাওয়ার জন্য অনুদান এনে দিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই অর্থের সংস্থান না হলে হয়তো অংশগ্রহণ অনেক কঠিন হতো।’ আন্তর্জাতিক এই উৎসবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা সামনের দিনগুলোতে তাঁদের ও অনুজদের আরও বড় অর্জনে উৎসাহ দেবে বলে আশা করছেন দলের সদস্যরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here