সৈয়দ মুজতবা আলী

নিউজ বাংলা ডেস্ক: সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তির নাম। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। রম্যরচনার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারী সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ভ্রমণকাহিনীগুলোর জন্যও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধের অসাধারণ সংমিশ্রণে ভরপুর। তিনিই বলেছিলেন সেই বিখ্যাত উক্তিটি- ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’।

১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম সিলেটের করিমগঞ্জে। তাঁর পৈতৃক ভিটা ছিল হবিগঞ্জে। স্কুলজীবন শেষ করে ১৯২১ সালে মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিককার ছাত্র। এখানেই তিনি সংস্কৃত, সাংখ্য, বেদান্ত, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ফারসি, আরবি, রুশ, ইতালিয়ান, উর্দু, হিন্দি ও গুজরাটি- এমন ১৮টি ভাষাশিক্ষায় দখল নেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে বিএ পাস করে তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তারপর তিনি দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে চলে যান জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি. ফিল লাভ করেন ১৯৩২ সালে। বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সময়ে তিনি পিএইচডি করছেন, সে সময়ে আইনস্টাইন ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার জোকস প্রতিযোগিতায় বাংলার এক সিলেটি সন্তান স্থানীয় জার্মান ভাষায় কৌতুক বলে দ্বিতীয় পুরস্কার জিতে নিল! এমনই ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর বহুভাষা প্রতিভা। মিসরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছুকাল পড়াশোনা করেছেন তিনি।

বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে জীবনে তিনি যে ভ্রমণকাহিনীগুলো লিখেছেন- তা ভ্রমণকাহিনীর সচরাচর নিয়মের ঊর্ধ্বে উঠে একটা নতুন অভিজ্ঞতা দান করে বাংলা সাহিত্যরসিকদের।

মুজতবা আলীর চাকরিজীবন শুরু হয় কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার প্রভাষকরূপে। সবশেষ তিনি বিশ্বভারতীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

তার প্রকাশিত মোট ত্রিশটি গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য : ভ্রমণকাহিনী ‘দেশে-বিদেশে’, ‘জলে-ডাঙায়’। উপন্যাস ‘অবিশ্বাস্য’, ‘শবনম’। রম্যরচনা ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ুরকণ্ঠী’ এবং ছোটগল্প ‘চাচা-কাহিনী’, ‘টুনি মেম’ ইত্যাদি। তার আরেকটি অনবদ্য গ্রন্থ ‘পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। তার এসব রচনা বিচিত্রবিধ জ্ঞানের সঙ্গে পাঠকদের চিত্তবিনোদন ও অনাবিল আনন্দদানে তুলনাহীন। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যু হয় এই গুণী লেখকের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here