নিউজবাংলা২৪ রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আবার শুরু হচ্ছে। ট্রেন ও লঞ্চের ভাড়া না বাড়লেও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মূলত সরকারনির্ধারিত কিছু শর্ত মেনে মালিকদের বাস সার্ভিস পরিচালনা করতেই এই বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে যাত্রীদেরকে প্রতি কিলোমিটারে ১.৬০ টাকা থেকে ১.৭০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হবে। নতুন নির্ধারিত এই ভাড়া ১ জুন থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে বাস ভাড়া বৃদ্ধির এই প্রজ্ঞাপন জারির আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সেখানে ভিডিও কলের মাধ্যমে যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দীর্ঘ দুই মাস পর বাস চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত আসে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে, প্রতিটি বাস-মিনিবাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালানোর সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে পরিবহন মালিকেরা লোকসানের কথা উল্লেখ করে শতভাগ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করেন। গত শনিবার বিআরটিএ ৮০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ৬০ শতাংশ হারে বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।
সড়ক মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্তে সিদ্ধান্তে বলা হয়, দূরপাল্লার পথে এখন ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বর্ধিত ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া দূরপাল্লার পথে থাকা সড়ক ও সেতুর টোলও মোট ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। ঢাকা ও এর আশপাশে মিনিবাসের কিলোমিটার-প্রতি ভাড়া হার ১ টাকা ৬০ পয়সা। আর বড় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা এবং বড় বাসে ৭ টাকা। সোমবার থেকে এর সাথে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া যোগ হবে। এই ভাড়া হার করোনাকালের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনঃপ্রযোজ্য হবে।
রোববার সকালে সংসদ এলাকার বাসভবন থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগ দেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে জনগণের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই সরকার প্রস্তাবিত (বিআরটিএ’র প্রস্তাবকৃত) ভাড়ার হার কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে সমন্বয় করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের জনগণের জন্য ৮০ শতাংশ ভাড়া সমন্বয় বাড়তি চাপ তৈরি করবে। সরকারকে যেমন যাত্রীদের স্বার্থ দেখতে হবে তেমনি পরিবহন খাতকেও সহযোগিতা করতে হবে। এসময় মন্ত্রী জানান, করোনাকালীন বাস-মিনিবাসগুলোকে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে অর্ধেক আসন খালি থাকবে। তিনি যানবাহনে যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টার কর্মীসহ সকলকে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের অনুরোধ জানান।
পরিবহন মালিকদের চার শর্ত পূরণ করতে হবে
৬০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধির ফলে পরিবহন মালিক ও চালক-হেলপারদের ৪টি শর্ত বেধে দিয়েছে সরকার। শর্তগুলো হলো- একজন যাত্রীকে বাস মিনিবাসের পাশাপাশি দুটি আসনের একটি আসনে বসে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। বর্ণিত প্রজ্ঞাপন উল্লেখিত ভাড়ার বিদ্যমান হারে প্রচলিত ধারার চার্টে বর্ণিত ধারার সাথে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ভাড়া বৃদ্ধির হার যোগ করে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ পূর্বক বাস-মিনিবাস পরিচালনা করতে হবে। অনুমোদিত ভাড়ার হার করোনাভাইরাসজনিত সংকটকালের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ সঙ্কট দূর হলে প্রজ্ঞাপনের বিদ্যমান হারের ভাড়া পুনঃপ্রযোজ্য হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here