আবদুর রহমান মল্লিক
একজন মা দশ মাস সন্তান গর্ভে ধারণ করে জন্ম দেন একটি শিশুর একটি প্রজন্মের। কত যত্ন কত সাবধানতায় পার করেন তিনি সেই দশটি মাস। যাতে তার পেটের সন্তানের কেনো একটুকু ক্ষতি না হয়। শুধু কি তাই যে মুহূর্তে ওই মার প্রসব বেদনা ওঠে তার জীবনটাই চলে আসে হাতের মুঠোয়, তিনি চলে যান জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একটি প্রাণ কণিকা সন্তান জন্ম দেয়ার সুখ তার স্বপ্ন-মাংসে মিশে যায়। একটি সুখ-স্বপ্নের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি মা সীমাহীন এই কষ্ট মেনে নেন। অনাদিকাল থেকে একজন নারী একজন মা এই অনিবার্য কর্তব্যটি পালন করে যাচ্ছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রাম তেমনি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান না করে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী নিরীহ বাঙালি ওপর একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। তাদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে ব্যাঘ্রের মতো গর্জে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা শেখ মজিবুর রহমান। ৭ই মার্চের ভাষণ সেদিন রক্তে আগুন জে¦লেছিল। জীবন দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করার বজ্রকঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লক্ষ লক্ষ জনতা। পাকিস্তানের কারাগারে সেদিন বঙ্গবন্ধুর জীবনও সঙ্কটাপন্ন হয়েছিল। পূর্ব বাংলা সেদিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগ, লাখো শহীদের রক্ত ও মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ভুমিষ্ট হয়েছিল শিশু রাষ্ট্র বাংলাদেশ, এই ষোলো ডিসেম্বরে। আমরা পেয়েছিলাম আমাদের মুক্তি, আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে পালন করতে যাচ্ছি সেই ৪৯ বিজয় দিবস।
একটি মুসলিম রাষ্ট্র ভেঙে যাচ্ছে বলে এই দোহাই দিয়ে সেদিন যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে হানাদার বাহিনীর সহায়তা করেছে, তাদের ভ‚মিকা কোনো বিবেচনায়ই সমর্থনযোগ্য নয়। তাদের ভাষায় একটি হিন্দু রাষ্ট্রের পেটের ভেতর তারা একটি সেকুলার রাষ্ট্র চাননি। কি বিচিত্র তাদের যুক্তি। সত্তুরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও সে বিজয়কে থোড়াই কেয়ার করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল সেটাকে কোনো অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করলনা। তারা তাদের চিন্তা এবং মস্তিষ্কে সেই চিন্তাই এখনো ধারণ করছে। তার জন্য আজও কোনো অনুশোচনাও নেই, দুঃখ প্রকাশ নেই, ক্ষমাও চাইবে না তারা। দেশের জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছে, জীবন দিয়েছে স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রতি সেই সম্মান, মর্যাদাবোধ ও অনুভ‚তি নেই।
দেশটা আমাদের সকলের। সকলেই আমরা দেশের গর্বিত নাগরিক। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় কিংবা সুসাশন দিতে না পারে সে ব্যর্থতা আওয়ামী লীগের। সেই প্রেক্ষিতে এ ভাবনা ভাবনার অবকাশ নেই যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত থাকলে এখানে দুধের নহর বইতো। তাদের চব্বিশ বছরের শাসন তো তাই বলে। ধর্মের প্রতি মানুষ সংবেদনশীল। পবিত্র ধর্মকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে ধর্মেরই অবমাননা করা হয়। ধর্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তা কাউকে দেননি। কারণ ধর্মীয় দল সৃষ্টির পূর্বেও পৃথিবীতে ধর্ম ছিল। একথা অস্বীকার করার জো নেই কোনো দল না করেও ইমানদার মুসলিম থাকা যায়।
দেশজুড়ে প্রতিবছরই মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয় উৎসব আনন্দে। এবারে করেনা কালে সেই ভাবে বিজয় উদযাপিত হচ্ছে না। তবুও এই বিজয় দিবসে আমাদের চেতনাকে শানিত করার দিন। বিজয় উৎসবের দিন। আমাদের আত্মবিচার করার প্রয়োজন রয়েছে যে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য কত মানুষ সর্বস্ব দিল। হাসি মুখে প্রাণ দিল সেই দেশের শিক্ষিত নাগরিকেরা কেন দুর্নীতির সাথে জড়িত হবে। টাকার পাহাড় গড়তে কেন রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করবে। বঙ্গবন্ধু কত অনুনয় বিনয় করে দুর্ণীতিমুক্ত থাকতে সকলের প্রতি দ্ব্যর্থহীন আহবান জানিয়েছেন। সেই সততা ও দেশ প্রেম সবার মাঝে জাগিয়ে তুলতে হবে।
মাতৃভ‚মিকে মায়ের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার শপথ নিতে হবে। শুধু বাহ্যিক উন্নয়ন নয় আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দাড়াতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিরোধী মতের মানুষকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। যারা মন্ত্রী হবেন, সংসদ সদস্য হবেন তারা যেন শুধু দলের না হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেন। একাত্তরে দেশমাতাকে যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করা হয়েছে, দেশের সম্মানটাও সেভাবে রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মহিমান্বিত হয়ে ওঠে বিজয় দিবসে সেই প্রত্যাশা করি।
বিজয়ের এই দিনে মহান শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাই । শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ সকল সেক্টর কমান্ডার, সকল বীরমুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। বিভেদ বিদ্বেষ ভুলে জনগনের মাঝে মেলবন্ধন সৃষ্টি হোক। প্রতিটি নাগরিক নিরাপত্তার সাথে বসবাস করুন। সকলের জীবন মঙ্গলময় হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here