নিউজ বাংলা ডেস্ক: নতুন আরেকটি ভাষা শিখতে চান? ভাবছেন বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেল? তাহলে আপনার জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন ইসরায়েলের একদল গবেষক। শিশু বয়সই ভাষা শেখার জন্য উপযুক্ত সময়, এমন চিরাচরিত ধারণা ভেঙে দিয়েছে ওই গবেষক দল। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর ওপর করা গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, বিদেশি ভাষা শেখার জন্য উপযুক্ত সময় হলো প্রাপ্ত বয়স। তিনটি দলে ভাগ করে—প্রথম দলে ৮, দ্বিতীয় দলে ১২ বছর এবং তৃতীয় দলে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের রেখে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা চালান তাঁরা। গবেষকেরা দেখেন, দ্বিতীয় ভাষা শেখায় প্রথম ও দ্বিতীয় দল অপেক্ষা ভালো করেছে তৃতীয় দল, একই সঙ্গে দ্বিতীয় দলও প্রথম দলের থেকে ভালো করেছে।
এ বিষয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক আন্তোনিলা সোরেস বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু শেষ হয়ে যায় এমন ধারণা ঠিক নয়। আন্তোনিলা সোরেস বলেন, ‘নিয়ম বুঝে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে শিশুরা খুব খারাপ করে। কারণ, এ সময় তাদের মনোযোগ ও স্মরণশক্তির ওপর নিজেদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ জন্য তরুণেরা ভালো করেন। তাই বয়স বাড়লেও অনেক কাজে ভালো করার সুযোগ থাকে।’
ইসরায়েলের ওই গবেষকেরা বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের সমস্যা সমাধানের কৌশলও উন্নত হয়, নিজের ও বিশ্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। ফলে, নতুন তথ্য ধারণের ক্ষমতাও বেড়ে যায়।
ভাষা শেখার ক্ষেত্রে শিশুদের প্রধান সুবিধা অনুকরণ করা। এ পদ্ধতিতে শিশুরা তাদের শিক্ষককে অনুকরণ করে, যেটা নাকি শেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আবার, এ পদ্ধতিতে স্থানীয় শিক্ষকের চেয়ে যে ভাষা শেখানো হবে, সে ভাষার নাগরিক হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে স্কটিস সরকারের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব চিত্র।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা ট্রেনকিক বলেন, ‘শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা সম্পূর্ণ ভিন্ন সময়ে বাস করে। তাই শেখার ক্ষেত্রে আমরা যখন তুলনা করি, সেটা কখনোই সঠিক পদ্ধতি নয়।’ এ বিষয়ে তিনি একটি উদাহরণ টানেন, কোনো পরিবার যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, স্বাভাবিকভাবে সে এলাকার ভাষা শিশুরা আগে রপ্ত করে।
কারণ হিসেবে ট্রেনকিক বলেন, শিশুরা স্কুলে যায়, অনেক মানুষের সঙ্গে মেশে কিন্তু দেখা যায় ওই সময় পিতামাতা অফিসে একাকী বসে কাজ করছেন। কারও সঙ্গে সঙ্গ দিলেও সেটা হাতে গোনা। শিশুরা চারপাশে মিশে গিয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা বড়দের থেকে বেশি অনুভব করে।
ট্রেনকিক নিজেও কুড়ি বছর বয়সে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিখেছেন। এ ভাষাতেই তিনি বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করেন। বলেন, মানুষ প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নতুন শব্দ শেখে। এমনকি তার নিজের ভাষাতেও। এ পদ্ধতি চলতে থাকে মধ্য বয়স পর্যন্ত। তারপর শেখার হার কমতে থাকে।
তবে এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ভাষায় পণ্ডিত হতে হলে শেখা শুরু করতে হয় দশ বছর থেকে। তবে তা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
তাই ভাষা শেখাটা শুরু করা যায় যেকোনো বয়সেই। তবে আর দেরি কেন? মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা বাস্তব রূপ দিতে লেগে যান এখনই।