নিউজ বাংলা ডেস্ক:
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন পিস্তল সঙ্গে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্যানিংমেশিন পার হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তার ব্যাগে পিস্তল থাকার বিষয়টি স্ক্যানারে ধরা না পড়লেও তিনি সংশ্লিষ্ট এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানান ভুল করে তার লাইসেন্স করা পিস্তলটি সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেছেন। ‘পিস্তল’ নিয়ে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই বিমানবন্দরে এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ওই ঘটনার পর বলা হচ্ছিল, দেশের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশির দায়িত্বে থাকা ফজলার রহমানকে বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে তারা। বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক জড়িতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ঘটনার বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, মঙ্গলবার দুপুরের পর নভোএয়ারের ভিকিউ-৯০৯ ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি।
তার ব্যাগে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তলটি বাসায় রেখে আসতে ভুলে যান। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের প্রবেশ গেটে ব্যাগটি তল্লাশি করা হয়।
নভোএয়ারের বোর্ডিং কাউন্টারে এসে ব্যাগে থাকা পিস্তলের কথা মনে পড়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের। স্ক্যানিং মেশিনে পিস্তল ধরা না পড়ায় তিনি অবাক হন। পরে এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তাৎক্ষণিক শাহজালাল কর্তৃপক্ষ তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেও জানান তিনি। নভোএয়ারের বুকিং কাউন্টারে গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ৯ এমএম পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি ভুলবশত সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তিনি। বিমানবন্দরে দুই দফা ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি করা হলেও পিস্তলটা শো করেনি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ঘোষণা ছাড়া বিমানবন্দরে পিস্তল নিয়ে প্রবেশের অপরাধে, সিভিল এভিয়েশন ইলিয়াস কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার করতে পারতো। যেহেতু তিনি দেশের একজন সম্মানী ব্যক্তি, তাই তাকে পিস্তল বহনের নিয়মগুলো ব্রিফ করে ছেড়ে দেয়া হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে যে তল্লাশি হয়, সেটি খুব জোরালো নয়। তাই বলে বিষয়টি গুরুত্বহীনও না। মেটাল জাতীয় কিছু থাকলে তা অবশ্যই ধরা পড়ার কথা। ইলিয়াস কাঞ্চনের পিস্তলের স্ক্যানিং বিষয়ে তদন্তের পর বলা যাবে।
আগ বাড়িয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। এর আগে গত ২৪শে ফেব্রুয়ারির বিমান ছিনতাইচেষ্টা ঘটনার পর শাহজালালসহ দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে বলে সিভিল এভিয়েশন থেকে জানানো হয়েছিল। ওই দিন বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটে ‘খেলনা পিস্তল’ নিয়ে উঠে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ আহমেদ নামে এক যুবক। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সে সময় তার সঙ্গে থাকা খেলনা পিস্তলটি শাহজালাল বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে ধরা পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্ত করা অবস্থায় এ ঘটনাটি ঘটলো।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমার ল্যাপটপের ব্যাগের মধ্যে আমার আর্মসটা ছিল, যেটা আমার মনে ছিল না। সেটা আমি স্ক্যানিং-এ দিয়েছি, তারপর যে দেহ তল্লাশি করে, সেখানে আমি দেহ তল্লাশি করিয়েছি। তখন আমি দেখি যে আমার ব্যাগ স্ক্যানিং হয়ে আসছে। সেখান থেকে নিয়ে ভেতরে যাওয়ার সময় আরেকটি স্ক্যানিং মেশিন আছে, সেখানে আবার আমার ব্যাগটা দিয়েছি, তখন আমার মনে পড়ে যে, আমার ব্যাগে আর্মস আছে। তখন আমি সিকিউরিটি গার্ডকে বললাম যে, আমার ব্যাগটা দেন এটার ভেতর আর্মস আছে, আমি সেটা জমা দিয়ে আসি। তখন আমি ওটা নিয়ে গিয়ে জমা দিলাম। সিকিউরিটি আসলো, তার কাছে জমা দিয়ে বললাম, আমার ব্যাগটা স্ক্যানিং হয়ে আসলো, এটার ভেতর আর্মস রয়ে গেল, অথচ আমাকে জবাবদিহি করতে হলো না। এখানে আমি না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতো। তখন তো অন্যরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারতো।
তিনি বলেন, পরে বিষয়টি জানাজানি হয়, যখন গণমাধ্যম থেকে ফোন দিচ্ছিল নিউজের জন্য…। আমি চাচ্ছিলাম না এটা নিউজ হোক। আমি সকলকে না করেছিলাম, এটা নিউজ করবেন না। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী আমার অস্ত্রটি জমা দেই এবং পরে নিয়ে আসি।