নিউজ বাংলা ডেস্ক:

ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে অস্ত্রধারী ব্যক্তি। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ওই ছিনতাইকারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজি-১৪৭ ফ্লাইটে অস্ত্রসহ উঠে মাহাদি নামের ছিনতাইকারী। মাঝ আকাশে সে বিমান ক্রুদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের কথা জানায়। ক্রুরা বিষয়টি ককপিটে থাকা পাইলটকে সংকেতের মাধ্যমে জানালে পাইলট ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিকাল পাঁচটা ৪১ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম শাহ আমনত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। তারপর যাত্রীদের জরুরি বহির্গমন দরজা দিয়ে বের করে আনা হয়। তখনও দুই পাইলট ককপিটে বন্দি ছিলেন।

তাদেরকে বিশেষ কৌশলে নামিয়ে আনা হয়। এসময় ছিনতাইকারী ও বিমানের ক্রু সাগর বিমানে ছিলেন।

ছিনতাইকারীকে পাকড়াও ও ক্রুকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে শুরু হয় তৎপরতা। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ডাকা হয় সেনাবাহিনীর সেনা কমান্ডোদের। আসেন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারাও। জরুরি অবতরণের পরই উড়োজাহাজটি ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় দুই ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস প্রস্তুতি চলে বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে। সারা দেশের মানুষের উৎসুক দৃষ্টি শাহ আমানতে। অবশেষে আট মিনিটের সেনা কমান্ডো অভিযানে সমাপ্তি হয় রুদ্ধশ্বাস ঘটনার। সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থার বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটি মুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান। রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, অস্ত্রধারী ব্যক্তি কিভাবে ফ্লাইটে উঠেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। রাত পৌনে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান জানান, অভিযানে ছিনতাই চেষ্টাকারী ব্যক্তি মারা গেছেন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম ‘মাহথি’- শুধু এটুকুই জানা গেছে। এছাড়া তার আর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

অভিযান শেষে জিওসি বলেন, যৌথ কমান্ডো অভিযানে প্রথমে মাহাথি নামে ওই যুবক বিমানের ভেতরে আহত হয়, পরে তাকে উদ্ধার করে বিমানের বাইরে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ছিনতাইকারী যুবক বাংলাদেশ বিমানের একজন ক্রুর কাছে নিজেকে মাহাথি নামে পরিচয় দেন। বিমানটি আকাশে উড্ডয়নকালীন সময়ে মাহাথি নামে ওই যুবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে দাবি জানান। পরে, তাকে নিবৃত্ত করতে আলাপ চালিয়ে যাওয়া হয়। একই সঙ্গে অপারেশনের পরিকল্পনাও চলতে থাকে। তিনি বলেন, যুবক তার স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন, সেখান থেকে হয়তো তার বিস্তারিত তথ্য ও ঠিকানা জানার সম্ভাবনা ছিল। অভিযানে আহত হওয়ার পর মারা যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মাহাথি পরিচয় দেয়া যুবকের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। লে. কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বে একটি সেনা কমান্ডো দল মাত্র আট মিনিটের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ছিনতাইকারীর সঙ্গে একটি পিস্তল থাকার তথ্য জানিয়ে মেজর জেনারেল মতিউর বলেন, ছিনতাইকারীর বয়স ২৫ থেকে ২৬ হবে।

অভিযানের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ছিনতাইকারীকে কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখার  চেষ্টা করি, পাশাপাশি পরিকল্পনা সাজিয়েছি। এক পর্যায়ে তাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলে  সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে সে অভিযানে অংশ নেয়া কমান্ডোদের ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এ পর্যায়ে কমান্ডো অভিযানে প্রথমে আহত, পরে নিহত হয় ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের চেষ্টার শিকার বিমানের সেই ফ্লাইটবর্ণনায় তিনি আরো বলেন, বিকাল ৫টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাহিনী প্রথম ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানতে পারে। ককপিট থেকে পাইলট বিষয়টি জানায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)কে। পরে প্লেনটি ৫টা ৪১ মিনিটে জরুরি অবতরণ করে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ঘটনা সামাল দিতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন আসে বিএনএস ঈশা খাঁ  থেকে। দ্রুততম সময়ে বিমানবন্দরে এসে সফল অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চেষ্টার অবসান ঘটান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পাইলট আমাদের প্রথম জানান ছিনতাইকারী বিদেশি। তবে তার সঙ্গে কথা বলে পরে তাকে বাংলাদেশি মনে হয়েছে। অভিযান শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

যাত্রীদের কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে জানিয়েছেন শাহ আমানত বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার- ই-জাহান।  তিনি বলেন, খবর পেয়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরে সেনা ও বিমান বাহিনী, র‌্যাব, সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার লোকজন জড়ো হন। যারা বিমানে কমান্ডো অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোড়জোড়ের মুখে অবশেষে অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করা গেছে।

ফ্লাইটে থাকা এক যাত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী ‘ফ্লাইটে হঠাৎ গুলির শব্দের মতো শব্দ শোনা গেছে। তখন সবাই  ছোটাছুটি শুরু করে। প্লেনটিও উঁচু-নিচু করছিল। যাত্রীরা সবাই কান্নাকাটি শুরু করে, দোয়া-দরুদ পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা  ভেবেছিলাম, প্লেনে হয়তো আগুন  লেগেছে। তখন দেখি, এয়ার  হোস্টেজরাও যাত্রীদের সিটে সিটবেল্ট বেঁধে বসা। অনেকক্ষণ এমন পরিস্থিতি থাকার পর প্লেনটি ল্যান্ড করে। তিনি বলেন, প্রথমে  গেট দিয়ে নামতে পারিনি। পরে পাশের জরুরি গেট দিয়ে আমাদের নিচে নামানো হয়। ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে জাসদের নির্বাচিত এমপি মইনুদ্দীন খান বাদল। তিনিও সব যাত্রীদের সঙ্গে নিরাপদে বেরিয়ে আসার পর গণমাধ্যমকে বলেন, ছিনতাইকারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here