নিউজবাংলা প্রতিবেদন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আমাদের দ্বারপ্রান্তে। রাত পোহালেই ঈদ। তবে এই ঈদ অন্যান্য বছরের মতো নয়। একেবারেই আলাদা, এমন একটা ঈদ আমাদের কল্পনার অতীত ছিল।কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরেছে।এমনি একটি প্রাণহীন ঈদের বিষয়ে আমরা কথা বলেছিলাম সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে ।ঈদে তাঁরা তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরলেন নিউজবাংলা২৪.কমকে।
রফিকুল ইসলাম আজাদ
বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেই ঈদ উদযাপিত হতে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে সাড়ে তিন লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেছে।আক্রান্ত হয়েছে অর্ধকোটি মানুষ।মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।বাংলাদেশে ৮ মার্চ থেকে করোনার সংক্রমণ শুরু হলেও মানুষকে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ছুটতে হয়েছে।সাংবাদিকদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।তিনজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।সাংবাদিক সর্ববৃহৎ সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতির হিসেবে বলতে চাই,সাংবাদিকরা দেশের কল্যাণে মানুষের কল্যানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে।তাদের প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্যদের জন্য প্রনোদনা ঘোষণা করা হলেও সাংবাদিকদের জন্য কোনো পলিসি নেই। সাংবাদিকদেন সুরক্ষার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধভাবে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা পয়োজন।অবিলম্বে এই কমিটি গঠনের জন্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানাই।এই দুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যেও একটি সুন্দর আগামির প্রত্যাশা করি।এই বিপদ একদিন কেটে যাবে। আবার আমরা কর্মমুখর হবো।সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন ঘরেই থাকুন।
ড.খন্দকার আকবর হোসেন
সারা দুনিয়ার মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বছরের দুই ঈদ, বিশেষ করে ঈদুল-ফিতর। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিনটি আসলেই খুব আনন্দের। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের কাছে অনেক আকাঙ্ক্ষিত দিন। তবে এ বছরের ঈদ সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে নাই। ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে আমরা ঈদ পালন করতে যাচ্ছি। কিন্তু সে ঈদে নেই আনন্দ, নেই সামাজিকতা, নেই একসংগে ঈদের নামাজ পরে কোলাকুলি। কোভিড-১৯ আমাদের সামাজিক বন্ধন, রীতিনীতি, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। সুস্থ্য থাকার আকুলতার পাশাপাশি সামনের অনাগত ভয়ংকর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন শংকিত। ঈদের আগমনে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনে প্রাথর্না করছি তিনি যেনো আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আমাদের মনোবলকে অটুট রাখেন।
নাইমুর রহমান দুর্জয়
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আসন্ন ঈদে দেশবাসী তথা আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রতি সালাম ও ঈদ শুভেচ্ছা জানাই।বৈশ্বিক মহামারী আমাদের পবিত্র ঈদ আয়োজন ও ঈদের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।।তাই বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে চলতে হবে।মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব।সম্মানিত ইমামদের আহবান জানাই তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদজামাতের আয়োজন করেন।প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা স্বাস্থ্যবিধি আমাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন,পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এটাও ইমানের একটি অঙ্গ । ঈদের দিনে কোনোভাবেই যেন করোনা সংক্রমণের পরিবেশ তৈরি না করি।সবাই সচেতন থাকি। সবাই ভালো থাকুন।
কে এম শহীদুল হক
ঈদ আনন্দের। ঈদ উৎসবের। কিন্তু এবারের ঈদ সেই বার্তা নিয়ে আসছে না। যা আমরা রোজার আগেই বুঝে গিয়েছিলাম। করোনার মহাদুর্যোগে যেখানে মানুষের জীবন নিয়েই সংশয়, উৎকণ্ঠা সেখানে চিরায়ত আনন্দের উৎসবের ঈদ করার তো প্রশ্নই উঠে না। তারপরও ঈদ বলে কথা, আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বলে কথা। আমরা ভেবেছিলাম এবার ঘরে বসেই পরিবার নিয়ে অন্তত যা না করলেই নয়, ঘরে সবচেয়ে যে সুন্দর পোশাকটা আছে তা পরিধান করে, ঘরেই নামাজটা পড়ে, ভালো কিছু খাবার খেয়ে এবার ঈদটা ভিন্নভাবে কাটাব। অনেক মুসলিম দেশেও করোনা মহামারীর কারণে মসজিদে-মাঠে ঈদের জামাত হচ্ছে না। খোদ সৌদি আরবে কারফিউ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এতই অসচেতন যে, তাদেরকে ঈদ করার জন্য বাড়িতে যেতেই হবে। তাইতো দেখলাম দলে দলে মানুষ কীভাবে ঢাকা ছাড়ছে। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এমন ঈদ উদযাপন কী আমরা চাই? আমরা তো একাত্তরেও তো আমাদের ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। তখন শত্রু ছিল দৃশ্যমান, আর এখন আমাদের লড়তে হচ্ছে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। তাই অন্তত একটিবার আমরা সাদামাটা ঈদ করতে চাই।
নাসরীন গীতি
এ বছর ঈদ-উল ফিতর যেন অন্যরকম এক অচেনা ঈদ। মার্চ থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতিতে সবাই এক ধরণের উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিনযাপন করছি। এরই মধ্যেই এসেছে মুসলিম উম্মাহ বছর ধরে প্রতীক্ষিত পবিত্র রমজান মাস। সিয়াম সাধনার পর কাল ঈদ-উল ফিতর। এই ঈদের আনন্দই থাকে নতুন পোশাকের কেনাকাটা, ঈদ জামাত, ঘুরাঘুরি। কিন্তু কিছুই এবার হচ্ছে না। নিজেদের জন্য তো নয়ই। সন্তানরাও শপিং করতে চায়নি এবার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে তাদেরও মন বিষন্ন। অথচ ঈদ এলে বাচ্চাদের আনন্দটাই বড় হয়ে উঠে। এবার আত্মীয় স্বজনদের আসা-যাওয়া ও নাই। তাই একঘরে ঈদ অনেকটাই নিরানন্দ। আল্লাহ আমাদের এ দুর্যোগ থেকে শিগগিরই মুক্তি দিন, যেন ঈদ-উল আযহা করতে পারি আনন্দ আর স্বস্তির সাথে।
সিফাত আরা হুসেন
“করোনা” নামক বৈশ্বিক মহামারীর মুখোমুখি হব তা কি কখনো ভাবতে পেরেছিলাম? পারি নি,আর পারিনি বলেই করোনার ভয়াবহতা জেনে আজ আমরা গৃহবন্দী। ঈদ কিংবা অন্যান্য যে উৎসবই আসুক না কেন এক অনিশ্চিত জীবনযাত্রার কাছে যেন সব ধূসরময়। নিজেকে নিরাপদ রেখে যতটুকু সাধ্য এবং সংগতি আছে তা নিয়েই চলছে ঈদ প্রস্তুতি। তবে এই প্রস্তুতিতে নেই নতুন পোশাক কেনার ব্যস্ততা কিংবা পুরনো ঘরকে নতুন করে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাবার তাড়া। করোনা যেন কিছুটা কর্মহীনতা পছন্দ করে,তাই সাদামাটা আয়োজনেই চলছে ঈদ আয়োজন যা একেবারেই না করলে নয়। আমার পিতামাতা ধর্মীয় কর্তব্যগুলো পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তা রক্ষা করে অল্পস্বল্প কাঁচা বাজার সদাই করেছেন। ব্যস, এতটুকুতেই ঈদ আয়োজনের সমাপ্তি টেনেছে। তবে,ব্যক্তিগতভাবে আমার করোনাকালীন ঈদ অনুভূতি একেবারেই শূন্যের দ্বারপ্রান্তে,কেবলই চাওয়া এই মুশকিল সময় যেন আল্লাহ উঠিয়ে নিয়ে আমাদের প্রতি দয়া করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদ একেবারে নির্জীব, প্রাণহীন, জাঁকজমকহীন।
মেহরাজ আহমেদ মিথুন
করোনার ক্লান্তিলগ্নে সবাইকে ঈদ মোবারক। জানিনা আগামী বছর সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর তৌফিক আল্লাহ দিবেন কিনা। এই করুণ সময়ে আমাদের ঘরে বসে ঈদ পালন করা এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই সবাই ঈদের দিনে বেশি বেশি প্রার্থনা করুন এবং ঘরে থাকুন। নিজেও সুস্থ থাকুন এবং আপনার পরিবারকেও সুস্থ রাখুন। তরুন বন্ধুদের আহবান জানাই আবেগের আতিশয্যে কেউ যেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না করে।সবাই মিলে করোনা মোকাবেলায় এগিয়ে আসি ঈদ মোবারক।