নিউজ বাংলা ডেস্ক :
যানবাহন চলাচলের জন্য ঢাকা-খুলনা মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এজন্যই শনিবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী ব্রিজে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় আটজনের প্রাণ।
গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজের নিরাপত্তার বেষ্টনী ছিল বাঁশ দিয়ে ঘেরা। ফলে দ্রুতগামী বাস আটকাতে এই রেলিং কোনো কাজেই আসেনি। একদিকে বেপরোয়া গতির যান অন্যদিকে বাঁশের রেলিং কেড়ে নেয় আটজনের প্রাণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আক্ষেপ করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের রেলিং থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনায় আনেনি। ধুলদী ব্রিজটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। ব্রিজের উত্তর পাশটি বাঁকা থাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি মোড় ঘুরলেই হঠাৎ ব্রিজ সামনে এসে পড়ে। ফলে অনেক সময় চালকদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়। যদি গাড়ির বেপরোয়া গতি থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এমন বাস্তবতার পরও ব্রিজের রেলিং যদি মানসম্মত না হয় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটা নিশ্চিত। এসব কারণেই শনিবার ব্রিজের রেলিং ভেঙে খাদে বাস পড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় আহত একাধিক যাত্রী বলেন, চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। যদি ব্রিজটিতে বাঁশের বদলে লোহার রেলিং থাকতো তাহলে হয়তো বাসটি ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যেতো না। এতো হতাহতের ঘটনা ঘটতো না। ব্রিজের নিচে পানি থাকলে হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। সড়ক বিভাগের আরও সচেতন হওয়া দরকার ছিল।
বিপরীত দিক থেকে আসা কমফোর্ট লাইনের দ্রুতগামী বাসটি একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে প্রথমত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে ব্রিজের বাঁশের বেড়া ভেঙে নিচে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে রেলিং যদি বাঁশের না হয়ে মানসম্মত হতো তবে দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। দৃশ্যত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, ব্রিজটিতে বাঁশের রেলিং দেয়া আছে। তবে যে স্থান দিয়ে গাড়িটি খাদে পড়েছে সে জায়গায় লোহার রেলিং ছিল।
ব্রিজে বাঁশের রেলিং দেয়া হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুর্ঘটনায় লোহার রেলিং ভেঙে যায়। পরবর্তীতে সাময়িকভাবে বাঁশ দিয়ে রেলিং দেয়া হয়। এ কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আমরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। পাশেই নতুন একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।
ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্রিজে কীভাবে দিনের পর দিন বাঁশের রেলিং থাকে তা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঈদুল আজহা শেষে সড়কপথে দুর্ঘটনায় প্রায়ই প্রাণ যাচ্ছে যাত্রীদের। এরপরও কেন কর্তৃপক্ষ ব্রিজের নিরাপত্তায় তৎপর হচ্ছে না এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।
জানা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ করছে মনিকো কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুর্ঘটনাকবলিত ধুলদী ব্রিজের পাশে সড়ক প্রশস্তকরণ ও অপর একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজও করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কাজের অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটিতে বাঁশের রেলিংয়ের বদলে লোহার রেলিং লাগানোরও দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমনকি ওই ব্রিজের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ডও লাগানোর ব্যবস্থা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে মনিকো কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় ব্রিজের রেলিং ভেঙে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে আট ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ২০ জন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিহত দুজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাদের নাম হাবিবুর রহমান ও ফারুক হোসেন। তাদের দু’জনেরই বাড়ি গোপালগঞ্জে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও তিনজন নারী।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি এ এফ এম নাছিম বলেন, ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের পাটগাতিগামী কমফোর্ট লাইনের একটি যাত্রীবাসী বাস ঘটনাস্থলে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। এ সময় বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয় যাত্রী নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ২০ যাত্রী। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই ব্যক্তি মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান ও হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি জানিয়েছেন এমপির এপিএস এ এইচ এম ফোয়াদ। তিনি বলেন, আহত রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হলে ছাত্রলীগের কর্মীদের রাখা হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ক্লাব ও সন্ধানী ডোনার ক্লাবের কর্মীদের রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।